Posts

Showing posts with the label আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ

একজন প্রবীণ বয়াতি - আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ ||কবিতার জগৎ

 মায়ের কাছে সন্তানের অঙ্গীকার,   তোমার জন্য কথার ঝুড়ি নিয়ে   তবেই না বাড়ি ফিরবো   লক্ষী মা, রাগ করো না,   মাত্রতো আর কটা দিন।       সেদিন সকালের রোদে   কৃষ্ণচূড়ার আবির   আকাশের চূড়ায় লালঝুটি।       সেগুন ফুলের আঘ্রাণ গায়ে মেখে   রুপালি মাছের মতো   উজানে সাঁতার কেটে   ওরা আসে   এক-দুই-দশটি পাঁপড়িতে   যুথবদ্ধ রক্তকমল।       পরনে বর্ণমালার নামাবলী   দৃষ্টিতে সবুজ হাওয়ার মুকুল   ধমণীতে নির্ঝরের জলতরঙ্গ   হৃদয়ে মায়ের দুধের শিশির   কণ্ঠে শিমুল ফুলের আনন্দ।       ওরা যখন গান করে   কখনো নক্ষত্রের মতো উচ্চকিত   কখনো শিশিরের মতো নিঃশব্দ   কখনো মাটির শিকর আন্দোলিত   কখনো মায়ের চোখ ভিজে যায়।       তখন বেতের ফলের মতো বিপন্ন রোদ   মায়ের আঁচলে শাবকের মতো বেড়ে ওঠে   দৃষ্টিহীন অন্ধকার হিরন্ময় সুনেত্র   মৃত্যুর চৌকাঠে পলাশের বৈভব   এবং কুয়াশার মানুষ স্পর্ধিত মধ্যাহ্ণ। ...

আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি - আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ

 আমি আমার পূর্বপুরুষের কথা বলছি।    তাঁর করতলে পলিমাটির সৌরভ ছিল    তাঁর পিঠে রক্তজবার মত ক্ষত ছিল।    তিনি অতিক্রান্ত পাহাড়ের কথা বলতেন    অরণ্য এবং শ্বাপদের কথা বলতেন    পতিত জমি আবাদের কথা বলতেন    তিনি কবি এবং কবিতার কথা বলতেন।    জিহ্বায় উচ্চারিত প্রতিটি সত্য শব্দ কবিতা,    কর্ষিত জমির প্রতিটি শস্যদানা কবিতা।    যে কবিতা শুনতে জানে না    সে ঝড়ের আর্তনাদ শুনবে।    যে কবিতা শুনতে জানে না    সে দিগন্তের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।    যে কবিতা শুনতে জানে না    সে আজন্ম ক্রীতদাস থেকে যাবে।    আমি উচ্চারিত সত্যের মতো    স্বপ্নের কথা বলছি।    উনুনের আগুনে আলোকিত    একটি উজ্জ্বল জানালার কথা বলছি।    আমি আমার মা’য়ের কথা বলছি,    তিনি বলতেন প্রবহমান নদী    যে সাতার জানে না তাকেও ভাসিয়ে রাখে।    যে কবিতা শুনতে জানে না    সে নদীতে ভাসতে পারে না।    যে কবিতা...

'মাগো ওরা বলে ' কবিতা - আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ

 ‘কুমড়ো ফুলে ফুলে    নুয়ে পড়েছে লতাটা,    সজনে ডাঁটায়    ভরে গেছে গাছটা,    আর, আমি ডালের বড়ি    শুকিয়ে রেখেছি—    খোকা তুই কবে আসবি!    কবে ছুটি?’       চিঠিটা তার পকেটে ছিল,    ছেঁড়া আর রক্তে ভেজা।       ‘মাগো, ওরা বলে,    সবার কথা কেড়ে নেবে    তোমার কোলে শুয়ে    গল্প শুনতে দেবে না।    বলো, মা, তাই কি হয়?    তাইতো আমার দেরী হচ্ছে।    তোমার জন্য কথার ঝুড়ি নিয়ে    তবেই না বাড়ী ফিরবো।    লক্ষ্মী মা রাগ ক’রো না,    মাত্রতো আর কটা দিন।’       ‘পাগল ছেলে’,    মা পড়ে আর হাসে,    ‘তোর ওপরে রাগ করতে পারি!’       নারকেলের চিঁড়ে কোটে,    উড়কি ধানের মুড়কি ভাজে    এটা সেটা আরো কত কি!    তার খোকা যে বাড়ী ফিরবে!    ক্লান্ত খোকা!       কুমড়ো ফুল    শুকিয়ে গেছে, ...