Posts

Showing posts with the label প্রেমেন্দ্র মিত্র

সাপ কবিতা - প্রেমেন্দ্র মিত্র || কবিতার জগৎ

 প্রথম সাপটা দেখবে নিথর পাথর সন্মোহিত,   কোন সে আদিম অন্ধ অঘোর অন্বেষণের দ্বিধা   আঁধার-ছোঁয়ানো ছায়া-বিদ্যুত হেনে খোলে কুণ্ডলী!      তারপর সাপ অনেক দেখবে   কেঁপে-ওঠা শরবন।   কাঁটা-দেওয়া ঘাস সভয়ে শুনবে   গোপন সঞ্চারণ,   ---শোনা না-শোনার সীমানার শুধু স্তব্ ধতা শিহরিত।      সব শেষে এক সাহসী সকাল   গহন অতল থেকে,   হিমেল হিংসা ছেঁকে নিয়ে এসে   রোদ্দুরে মেলাবে কি?   ছন্দে মেলাবে ঘৃণা-পিচ্ছল বিবরের   সরীসৃপের বিষফণা আর পাখিদের নীল মুক্তি!

কাগজ বিক্রী - প্রেমেন্দ্র মিত্র | kobitar jagot

 হাঁকে ফিরিওলা--- কাগজ বিক্রী,   পুরানো কাগজ চাই!   ঘরের কোণেতে সঞ্চিত যত   তাড়াগুলি হাতড়াই।   পুরানো কাগজ চাই।   বহুদিন ধরে জঞ্জাল বাড়ে   সের দরে বেচি তাই।   কেমন করিয়া একটি তাহার   হঠাত্ নজরে পড়ে,   দেখি সমুদ্রে যাত্রী-জাহাজ   কোথাও ডুবিল ঝড়ে।   হঠাত্ নজরে পড়ে,   আবার কোথায় মানুষের মাথা,   বিকাল খুলির দরে।      নিরুদ্দেশ কে সন্তান লাগি   ঘোষিছে পুরস্কার,   মৃত্যুঞ্জয় অমৃত কারা   রিছে আবিষ্কার।   ঘোষিছে পুরস্কার,   পলাক খুনে লুকায়ে কোথায়   চাই যে হদিস্ তার।      কোন সে বধুর বুকের আগুন   ভিতর করিয়া খাক্,   অবশেষে লাগে বসনে তাহার,   পুড়ে গেল সাতপাক।   ভিতর করিয়া খাক্,   কোন্ সে গিরির গরল অনল   ঘটাল দুর্বিপাক।      হারানো তারিখ ফিরে আসে ফের   পুরানো কাগজ পড়ি;   আমার নয়নে সহসা পোহায়   সে দিনের বিভাবরী।   পুরানো কাগজ পড়ি,   রাখিল ধরনী সেই দিনটির   পায়ের চিহ্ন ধরি।  ...

ফ্যান কবিতা - প্রেমেন্দ্র মিত্র ||কবিতার জগৎ

 নগরের পথে পথে দেখেছ অদ্ভুত এক জীব   ঠিক মানুষের মতো   কিংবা ঠিক নয়,   যেন তার ব্যঙ্গ-চিত্র বিদ্রূপ-বিকৃত!   তবু তারা নড়ে চড়ে কথা বলে, আর   জঞ্জালের মত জমে রাস্তায়-রাস্তায়।   উচ্ছিষ্টের আস্তাকূড়ে ব’সে ব’সে ধোঁকে   আর ফ্যান চায়।   রক্ত নয়, মাংস নয়,   নয় কোন পাথরের মতো ঠান্ডা সবুজ কলিজা।   মানুষের সত্ ভাই চায় সুধু ফ্যান;   তবু যেন সভ্যতার ভাঙেনাকো ধ্যান!   একদিন এরা বুঝি চষেছিল মাটি   তারপর ভুলে গেছে পরিপাটি   কত-ধানে হয় কত চাল;   ভুলে গেছে লাঙলের হাল   কাঁধে তুলে নেওয়া যায়।   কোনোদিন নিয়েছিল কেউ,   জানেনাকো আছে এক সমুদ্রের ঢেউ   পাহাড়-টলানো।   অন্ন ছেঁকে তুলে নিয়ে,   ক্ষুধাশীর্ণ মুখে যেই ঢেলে দিই ফ্যান   মনে হয় সাধি এক পৈশাচিক নিষ্ঠুর কল্যাণ;   তার চেয়ে রাখি যদি ফেলে,   পচে পচে আপন বিকারে   এই অন্ন হবে না কি মৃত্যুলোভাতুরা   অগ্নি-জ্বালাময় তীব্র সুরা!   রাজপথে এই সব কচি কচি শিশুর কঙ্কাল–মাতৃস্তন্যহীন,   দধীচির হাড় ছিলো এর চেয়ে আরো কি কঠিন?

কথা কবিতা - প্রেমেন্দ্র মিত্র ||কবিতার জগৎ

 তারপরও কথা থাকে;   বৃষ্টি হয়ে গেলে পর   ভিজে ঠাণ্ডা বাতাসের মাটি-মাখা গন্ধের মতন   আবছায়া মেঘ মেঘ কথা;   কে জানে তা কথা কিংবা   কেঁপে ওঠা রঙিন স্তব্ধতা।   সে কথা হবে না বলা তাকে:   শুধু প্রাণ ধারণের প্রতিজ্ঞা ও প্রয়াসের ফাঁকে ফাঁকে   অবাক হৃদয়   আপনার সঙ্গে একা-একা   সেই সব কুয়াশার মত কথা কয়।   অনেক আশ্বর্য কথা হয়তো বলেছি তার কানে।   হৃদয়ের কতটুকু মানে   তবু সে কথায় ধরে!   তুষারের মতো যায় ঝরে   সব কথা কোনো এক উত্তুঙ্গ শিখরে   আবেগের,   হাত দিয়ে হাত ছুঁই,   কথা দিয়ে মন হাতড়াই   তবু কারে কতটুকু পাই।   সব কথা হেরে গেলে   তাই এক দীর্ঘশ্বাস বয়,   বুঝি ভুলে কেঁপে ওঠে   একবার নির্লিপ্ত সময়।   তারপর জীবনের ফাটলে-ফাটলে   কুয়াশা জড়ায়   কুয়াশার মতো কথা হৃদয়ের দিগন্তে ছড়ায়। 

পাখিদের মন কবিতা - প্রেমেন্দ্র মিত্র || কবিতার জগৎ

 নির্জন প্রান্তরে ঘুরে হঠাত্ কখন,   হয়তো পেতেও পারি পাখিদের মন।   আর শুধু মাটি নয় শ্স্য নয়,   নয় শুধু ভার,   আর-এক বিদ্রোহী ধিক্কার–   পৃথিবী-পরাস্ত-করা উজ্জল উত্ ক্ষেপ।   আজো এরা মাঠে-ঘাটে মাটি খুঁটে খায়,   মেনে নেয় সব কিছু দায় ;   তবু এক সুনীল শপথ   তাদের বুকের রক্ত তপ্ত করে রাখে।   জীবনের বাঁকে বাঁকে, যত গ্লানি যত কোলাহল   ব্যাধের গুলির মতো বুকে বিঁধে রয়,   সে-উত্তাপে গ’লে গিয়ে হ’য়ে যায় ক্ষয়।   শুধু দুটি তীব্র তীক্ষ্ণ দুঃসাহসী ডানা,   আকাশের মানে না সিমানা।   কোনোদিন এ-হৃদয় হয় যদি একান্ত নির্জন,   হয়তো পেতেও পারি পাখিদের মন   –আর এক সূর্য-সচেতন।

এক আকাশ অন্ধকার কবিতা - প্রেমেন্দ্র মিত্র || কবিতার জগৎ

 একটি মানুষের মধ্যে আমি   এক আকাশ অন্ধকার দেখেছিলাম।   কতজনের সঙ্গেই ত মিশি,   ভালবাসি, ঘৃণা করি, থাকি উদাসীন।   তারা সব টুকরো টুকরো আলো   উজ্জল কি স্তিমিত।   তাদের চেনা যায়, পড়া যায়   মানেও পাওয়া যায় ছাড়াছাড়া।   তাদের সঙ্গে পরিচয় দিয়েই   জীবনের প্রাঞ্জল পুঁথি প্রতিদিন লেখা।   কিন্তু মন নিজের অগোচরে   খোঁজে সেই অনাদি আশ্চর্য অন্ধকার   সব অভিধান যেখানে অচল, সব নামতা নিরর্থক।   সেই এক আকাশ অন্ধকার   আমি পেয়েছিলাম একবার   পথে যেতে কোন এক স্টেশনের প্লাটফর্মে   দুপুর রোদে গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে   দুটি অতল চোখের মধ্যে।   সে পুরুষ কি নারী   কেউ যেন জানতে না চায়,   জানতে না চায় কী তার বয়স।   সে সময়ের অতীত, যৌনতার উর্দ্ধে।   তার অন্ধকার ত না-এর শূন্যতা নয়,   নিহারীকা-গর্ভ এক রহস্য-নিবিড়তা।   সত্তার গহনে এই অন্ধকার যদি লুপ্ত হয়,   আমাদের সাজানো শহর   আর সফল জীবন ত শুধু   পরিসংখ্যানের অন্ক।   এত খন্ড খন্ড আলোর জটলায়,   এত মাপজোকের দু...

'হঠাৎ যদি' কবিতা - প্রেমেন্দ্র মিত্র || কবিতার জগৎ

 আমায় যদি হঠাৎ কোনো ছলে   কেউ ক’রে দেয় আজকে রাতের রাজা,   করি গোটাকয়েক আইন জারি   দু’এক জনায় খুব কষে দিই সাজা।   মেঘগুলোকে করি হুকুম সব   ছুটি তোদের, আজকে মহোৎসব।   বৃষ্টি-ফোঁটার ফেলি চিকন চিক্   ঝুলিয়ে ঝালর ঢাকি চতুর্দিক,   দিলদরিয়া মেজাজ করে কই,   বাজগুলো সব স্ফূর্তি করে বাজা।   হাওয়ায় বলি, হল্লা করে চল   তারার বাতি নিভিয়ে দলে-দল,   অন্ধকারে সত্যি কথার শেষে   রাজকন্যা পদ্মাবতীর দেশে।   ঘুমে পুরীর সেপাইগুলো ঢোলে,   তাদের ধরে খুব কষে দেই সাজা।   আমায় যদি হঠাৎ কোনো ছলে   কেউ করে দেয় আজকে রাতের রাজা।   সুপ্তিমগন পদ্মাবতীর পুরে   মহল বেড়াই টহল দিয়ে ঘুরে।   ধীরে গিয়ে বসি শিয়রদেশে   একটি মালা পরায়ে দিই কেশে,   হৃদয়খানি জোর করে নিই কেড়ে;   বুক বেঁধে দিই তাহারে সাজা।   আমায় যদি হঠাৎ কোনো ছলে   কেউ করে দেয় আজকে রাতের রাজা।   ওলট-পালট করি বিশ্বখানা   ভাঙি যেথায় যত নিষেধ মানা;   মনের মতো কানুন করি ক’টা   রাজা হওয়ার খুব করে নিই ...

জং কবিতা -প্রেমেন্দ্র মিত্র | কবিতার জগৎ

 হাওয়া বয় সন সন   তারারা কাঁপে।   হৃদয়ে কি জং ধরে   পুরানো খাপে।   কার চুল এলোমেলো।   কি বা তাতে এলো গেলো!   কার চোখে কত জল   কে বা তা মাপে?   দিনগুলি কুড়োতে   কত কি তো হারালো।   ব্যথা কই সে ফলা-র   বিঁধেছে যা ধারালো!   হাওয়া বয় সন সন   তারারা কাঁপে।   জেনে কি বা প্রয়োজন   অনেক দূরে বন   রাঙা হ’ল কুসুমে, না,   বহ্নিতাপে?   হৃদয়ে মরচে-ধরা   পুরানো খাপে।

'হারিয়ে' কবিতা -প্রেমেন্দ্র মিত্র |কবিতার জগৎ

 কোনোদিন গেছ কি হারিয়ে,   হাট-বাট নগর ছাড়িয়ে   দিশাহারা মাঠে,   একটি শিমূলগাছ নিয়ে   আকাশের বেলা যেথা কাটে?   সেখানে অনেক পথ খুঁজে   পৃথিবী শুয়েছে চোখ বুজে   এলিয়ে হৃদয়।   শিয়রে শিমূল শুধু একা   চুপ করে রয়।   পথ খুঁজে যারা হয়রান   কোনোদিন সেই ময়দান   তারা পেয়ে যায়।   হঠাৎ অবাক হয়ে   আশেপাশে ওপরে তাকায়।   কোনো পথ যেখানেতে নেই   সেখানেই মেলে এক খেই   আরেক আশার   সব পথ পারাবার পর   বুঝি খোঁজ মেলে আপনার।      একদিন যেও না হারিয়ে   চেনা মুখ শহর ছাড়িয়ে   অজানা প্রান্তরে   একটি শিমূল আর আকাশ যেখানে   মুখোমুখি চায় পরস্পরে।