Posts

Showing posts with the label কাজী নজরুল ইসলাম

বাজিছে দামামা বাঁধরে আমামা - কাজী নজরুল ইসলাম | kobitar jagot

 বাজিছে দামামা বাঁধরে আমামা  শির উঁচু করি মুসলমান।  দাওয়াত এসেছে নয়া যমানার  ভাঙ্গা কেল্লায় ওড়ে নিশান।   মুখেতে কালেমা হাতে তলোয়ার,  বুকে ইসলামী জোশ দুর্বার,  হৃদয়ে লইয়া এশক আল্লাহর  চল আগে চল বাজে বিষান।  ভয় নাই তর গলায় তাবিজ  বাঁধা যে রে তোর পাক কোরান।।   নহি মোরা জীব ভোগ- বিলাসের,  শাহাদাত ছিল কাম্য মোদের,  ভিখারির সাজে খলীফা যাদের  শাসন করিল আধা জাহান-  তারা আজ পড়ে ঘুমায়ে বেহুঁশ  বাহিরে বহিছে ঝড় তুফান।।   ঘুমাইয়া কাজা করেছি ফজর,  তখনো জাগিনি যখন যোহর,  হেলা ও খেলায় কেটেছে আসর  মাগরিবের আজ শুনি আজান।  জামাত শামিল হওরে এশাতে  এখনো জমাতে আছে স্থান।।   শুকনো রুটিকে সম্বল ক’রে  যে ঈমান আর যে প্রানের জোরে  ফিরেছে জগত মন্থন ক’রে  সে শক্তি আজ ফিরিয়ে আন।  আল্লাহ আকবর রবে পুনঃ  কাঁপুক বিশ্ব দূর বিমান।

খেয়া-পারের তরণী কবিতা - কাজী নজরুল ইসলাম | kobitar jagot

 যাত্রীরা রাত্তিরে হতে এল খেয়া পার,    বজ্রেরি তূর্যে এ গর্জেছে কে আবার?    প্রলয়েরি আহ্বান ধ্বনিল কে বিষাণে!    ঝন্‌ঝা ও ঘন দেয়া স্বনিল রে ঈশানে!        নাচে পাপ-সিন্ধুতে তুঙ্গ তরঙ্গ!    মৃত্যুর মহানিশা রুদ্র উলঙ্গ!    নিঃশেষে নিশাচর গ্রাসে মহাবিশ্বে,    ত্রাসে কাঁপে তরণীর পাপী যত নিঃস্বে।        তমসাবৃতা ঘোরা ‘কিয়ামত’ রাত্রি,    খেয়া-পারে আশা নাই ডুবিল রে যাত্রী!    দমকি দমকি দেয়া হাঁকে কাঁপে দামিনী,    শিঙ্গার হুঙ্কারে থরথর যামিনী!        লঙ্ঘি এ সিন্ধুরে প্রলয়ের নৃত্যে    ওগো কার তরী ধায় নির্ভীক চিত্তে–    অবহেলি জলধির ভৈরব গর্জন    প্রলয়ের ডঙ্কার ওঙ্কার তর্জন!        পুণ্য-পথের এ যে যাত্রীরা নিষ্পাপ,    ধর্মেরি বর্মে সু-রক্ষিত দিল্ সাফ!    নহে এরা শঙ্কিত বজ্র নিপাতেও    কাণ্ডারী আহ্‌মদ তরী ভরা পাথেয়।     ...

রণ-ভেরী কবিতা - কাজী নজরুল ইসলাম |kobitar jagor

 ওরে  আয়!    ঐ মহা-সিন্ধুর পার হতে ঘন রণ-ভেরী শোনা যায়–    ওরে  আয়!    ঐ  ইস্‌লাম ডুবে যায়!    যত শয়তান    সারা ময়দান    জুড়ি  খুন তার পিয়ে হুঙ্কার দিয়ে জয়-গান শোন্ গায়!    আজ   শখ করে জুতি-টক্করে    তোড়ে  শহীদের খুলি দুশ্‌মন পায় পায়–    ওরে আয়!    তোর জান যায় যাক, পৌরুষ তোর মান যেন নাহি যায়!    ধরে ঝন্‌ঝার ঝুঁটি দাপটিয়া শুরু মুস্‌লিম-পঞ্জায়!    তোর মান যায় প্রাণ যায়–    তবে বাজাও বিষাণ, ওড়াও নিশান! বৃথা ভীরু সম্‌ঝায়!    রণ-দুর্মদ রণ চায়!    ওরে আয়!    ঐ  মহা-সিন্ধুর পার হতে ঘন রণ-ভেরী শোনা যায়!    ওরে আয়!    ঐ ঝননননন রণ-ঝনঝন ঝন্‌ঝনা শোনা যায়!    শুনি এই ঝন্‌ঝনা-ব্যঞ্জনা নেবে গঞ্জনা কে রে হায়?    ওরে   আয়!    তোর ভাই ম্লান চোখে চায়,    মরি লজ্জায়,    ওরে সব যায়,    তবু কব্‌জ...

ধূমকেতু কবিতা - কাজী নজরুল ইসলাম | কবিতার জগৎ

 আমি যুগে যুগে আসি, আসিয়াছি পুন মহাবিপ্লব হেতু    এই  স্রষ্টার শনি মহাকাল ধূমকেতু!    সাত সাতশো নরক-জ্বালা জলে মম ললাটে,    মম ধূম-কুণ্ডুলি করেছে শিবের ত্রিনয়ন ঘর ঘোলাটে!    আমি অশিব তিক্ত অভিশাপ,    আমি   স্রষ্টার বুকে সৃষ্টি-পাপের অনুতাপ-তাপ-হাহাকার–    আর    মর্তে সাহারা-গোবি-ছাপ,    আমি   অশিব তিক্ত অভিশাপ!        আমি  সর্বনাশের ঝাণ্ডা উড়ায়ে বোঁও বোঁও ঘুরি শূন্যে,    আমি বিষ-ধূম-বাণ হানি একা ঘিরে ভগবান-অভিমুন্যে।    শোঁও শন-নন-নন-শন-নন-নন শাঁই শাঁই,    ঘুর্  পাক্ খাই, ধাই পাঁই পাঁই    মম  পুচ্ছে জড়ায়ে সৃষ্টি;    করি উল্কা-অশনি-বৃষ্টি,–    আমি একটা বিশ্ব গ্রাসিয়াছি, পারি গ্রাসিতে এখনো ত্রিশটি।    আমি   অপঘাত দুর্দৈব রে আমি সৃষ্টির অনাসৃষ্টি!        আমি   আপনার বিষ-জ্বালা-মদ-পিয়া মোচড় খাইয়া খাইয়া    জোর বুঁদ হয়ে আমি চলেছি ...

আগমনী কবিতা - কাজী নজরুল ইসলাম | kobitar jagot

 একি রণ-বাজা বাজে ঘন ঘন–    ঝন রনরন রন ঝনঝন!    সেকি    দমকি দমকি    ধমকি ধমকি    দামা-দ্রিমি-দ্রিমি গমকি গমকি    ওঠে চোটে চোটে,    ছোটে লোটে ফোটে    বহ্নি-ফিনিকি     চমকি   চমকি    ঢাল-তলোয়ারে খনখন!    একি    রণ-বাজা বাজে ঘন ঘন    রণ ঝনঝন ঝন রণরণ!        হৈ  হৈ রব    ঐ  ভৈরব    হাঁকে,   লাখে লাখে    ঝাঁকে  ঝাঁকে ঝাঁকে    লাল     গৈরিক-গায় সৈনিক ধায় তালে তালে    ওই পালে পালে,    ধরা কাঁপে দাপে।    জাঁকে মহাকাল কাঁপে থরথর!    রণে কড়কড় কাড়া-খাঁড়া-ঘাত,    শির পিষে হাঁকে রথ-ঘর্ঘর-ধ্বনি ঘররর!    'গুরু গরগর' বোলে ভেরী তূরী,    'হর হর হর'    করি চীৎকার ছোটে সুরাসুর-সেনা হনহন!    ওঠে   ঝন্‌ঝা ঝাপটি দাপটি সাপটি    হু-হু-হু-হু-হু-হু-শনশন!    ছোটে...

উৎসর্গ (অগ্নিবীণা) - কাজী নজরুল ইসলাম | কবিতার জগৎ

 ভাঙা বাংলার রাঙা যুগের আদি পুরোহিত, সাগ্নিক বীর    শ্রীবারীন্দ্রকুমার ঘোষ    শ্রীশ্রীচরণারবিন্দেষু        অগ্নি-ঋষি! অগ্নি-বীণা তোমায় শুধু সাজে।    তাই তো তোমার বহ্নি-রাগেও বেদন-বেহাগ বাজে॥    দহন-বনের গহন-চারী–    হায় ঋষি– কোন্ বংশীধারী    নিঙ্‌ড়ে আগুন আন্‌লে বারি    অগ্নি-মরুর মাঝে।    সর্বনাশা কোন্ বাঁশি সে বুঝ্‌তে পারি না যে॥        দুর্বাসা হে! রুদ্র তড়িৎ হান্‌ছিলে বৈশাখে,    হঠাৎ সে কার শুন্‌লে বেণু কদম্বের ঐ শাখে।    বজ্রে তোমার বাজ্‌ল বাঁশি,    বহ্নি হলো কান্না হাসি.    সুরের ব্যথায় প্রাণ উদাসী–    মন সরে না কাজে।    তোমার   নয়ন-ঝুরা অগ্নি-সুরেও রক্ত-শিখা বাজে।

প্রলয়োল্লাস কবিতা - কাজী নজরুল ইসলাম | kobitar jagot

 তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!    তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!!    ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কাল্-বোশেখির ঝড়।    তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!    তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!!        আস্‌ছে এবার অনাগত প্রলয়-নেশার নৃত্য-পাগল,    সিন্ধু-পারের সিংহ-দ্বারে ধমক হেনে ভাঙ্ল আগল।    মৃত্যু-গহন অন্ধ-কূপে    মহাকালের চণ্ড-রূপে–    ধূম্র-ধূপে    বজ্র-শিখার মশাল জ্বেলে আস্‌ছে ভয়ঙ্কর–    ওরে ঐ হাস্ছে ভয়ঙ্কর!    তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!    তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!!        ঝামর তাহার কেশের দোলায় ঝাপ্‌টা মেরে গগন দুলায়,    সর্বনাশী জ্বালা-মুখী ধূমকেতু তার চামর ঢুলায়!    বিশ্বপাতার বক্ষ-কোলে    রক্ত তাহার কৃপাণ ঝোলে    দোদুল্‌ দোলে!    অট্টরোলের হট্টগোলে স্তব্ধ চরাচর–    ওরে ঐ স্তব্ধ চরাচর!    তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!    তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!!        দ্বাদশ রবির বহ্ন...

সিন্ধুঃ তৃতীয় তরঙ্গ - কাজী নজরুল ইসলাম | কবিতার জগৎ

 হে ক্ষুধিত বন্ধু মোর, তৃষিত জলধি,    এত জল বুকে তব, তবু নাহি তৃষার অবধি!    এত নদী উপনদী তব পদে করে আত্মদান,    বুভুক্ষু! তবু কি তব ভরলি না প্রাণ?    দুরন্ত গো, মহাবাহু    ওগো রাহু,    তিন ভাগ গ্রাসিয়াছ-এক ভাগ বাকী!    সুরা নাই-পাত্র-হাতে কাঁপিতেছে সাকী!        হে দুর্গম! খোলো খোলো খোলো দ্বার।    সারি সারি গিরি-দরী দাঁড়ায়ে দুয়ারে করে প্রতীক্ষা তোমার।    শস্য-শ্যামা বসুমতী ফুলে-ফলে ভরিয়া অঞ্জলি    করিছে বন্দনা তব, বলী!    তুমি আছ নিয়া নিজ দুরন্ত কল্লোল    আপনাতে আপনি বিভোল!    পাশে না শ্রবণে তব ধরণীতে শত দুঃখ-গীত;    দেখিতেছ বর্তমান, দেখেছ অতীত,    দেখিবে সুদূরে ভবিষ্যৎ-    মৃত্যুঞ্জয়ী দ্রষ্টা, ঋষি, উদাসীনবৎ!    ওঠে ভাঙে তব বুকে তরঙ্গের মতো    জন্ম-মৃত্যু দুঃখ-সুখ, ভূমানন্দে হেরিছ সতত!        হে পবিত্র! আজিও সুন্দর ধরা, আজিও অম্লান    সদ্য...

সিন্ধুঃ দ্বিতীয় তরঙ্গ - কাজী নজরুল ইসলাম | কবিতার জগৎ

 হে সিন্ধু, হে বন্ধু মোর    হে মোর বিদ্রোহী!    রহি’ রহি’    কোন্‌ বেদনায়    তরঙ্গ-বিভঙ্গে মাতো উদ্দাম লীলায়!    হে উন্মত্ত, কেন এ নর্তন?    নিষ্ফল আক্রোশে কেন কর আস্ফালন    বেলাভূমে পড়ো আছাড়িয়া!    সর্বগ্রাসী! গ্রাসিতেছ মৃত্যু-ক্ষুধা নিয়া    ধরণীরে তিলে-তিলে!    হে অস্থির! স্থির নাহি হ’তে দিলে    পৃথিবীরে! ওগো নৃত্য-ভোলা,    ধরারে দোলায় শূন্যে তোমার হিন্দোলা!    হে চঞ্চল,    বারে বারে টানিতেছ দিগন্তিকা-বন্ধুর অঞ্চল!    কৌতুকী গো! তোমার এ-কৌতুকের অন্ত যেন নাই।-    কী যেন বৃথাই    খুঁজিতেছ কূলে কূলে    কার যেন পদরেখা!-কে নিশীথে এসেছিল ভুলে    তব তীরে, গর্বিতা সে নারী,    যত বারি আছে চোখে তব    সব দিলে পদে তার ঢালি’,    সে শুধু হাসিল উপক্ষায়!    তুমি গেলে করিতে চুম্বন, সে ফিরালো কঙ্কণের ঘায়!    –গেল চ’লে নারী!    সন্ধান করিয়া ফে...

সিন্ধুঃ প্রথম তরঙ্গ - কাজী নজরুল ইসলাম | kobitar jagot

 হে সিন্ধু, হে বন্ধু মোর, হে চির-বিরহী,    হে অতৃপ্ত! রহি’ রহি’    কোন্‌ বেদনায়    উদ্বেলিয়া ওঠ তুমি কানায় কানায়?    কি কথা শুনাতে চাও, কারে কি কহিবে বন্ধু তুমি?    প্রতীক্ষায় চেয়ে আছে উর্ধ্বে নীলা নিম্নে বেলা-ভুমি!    কথা কও, হে দুরন্ত, বল,    তব বুকে কেন এত ঢেউ জাগে, এত কলকল?    কিসের এ অশান্ত গর্জন?    দিবা নাই রাত্রি নাই, অনন্ত ক্রন্দন    থামিল না, বন্ধু, তব!    কোথা তব ব্যথা বাজে! মোরে কও, কা’রে নাহি ক’ব!    কা’রে তুমি হারালে কখন্?    কোন্‌ মায়া-মণিকার হেরিছ স্বপন?    কে সে বালা? কোথা তার ঘর?    কবে দেখেছিলে তারে? কেন হ’ল পর    যারে এত বাসিয়াছ ভালো!    কেন সে আসিল, এসে কেন সে লুকালো?    অভিমান ক’রেছে সে?    মানিনী ঝেপেছে মুখ নিশীথিনী-কেশে?    ঘুমায়েছে একাকিনী জোছনা-বিছানে?    চাঁদের চাঁদিনী বুঝি তাই এত টানে    তোমার সাগর-প্রাণ, জাগায় জোয়ার?   ...

বিদায়-স্মরণে কবিতা - কাজী নজরুল ইসলাস | কবিতার জগৎ

 পথের দেখা এ নহে গো বন্ধু    এ নহে পথের আলাপন।    এ নহে সহসা পথ-চলা শেষে    শুধু হাতে হাতে পরশন।।    নিমেষে নিমেষে নব পরিচয়ে    হ’লে পরিচিত মোদের হৃদয়ে,    আসনি বিজয়ী-এলে সখা হ’য়ে,    হেসে হ’রে নিলে প্রাণ-মন।।    রাজাসনে বসি’ হওনি ক’ রাজা,    রাজা হ’লে বসি, হৃদয়ে,    তাই আমাদের চেয়ে তুমি বেশী    ব্যথা পেলে তব বিদায়ে।    আমাদের শত ব্যথিত হৃদয়ে    জাগিয়া রহিবে তুমি ব্যথা হ’য়ে,    হ’লে পরিজন চির-পরিচয়ে-    পুনঃ পাব তার দরশন,    এ নহে পথের আলাপন।

ফাল্গুনী কবিতা - কাজী নজরুল ইসলাম | কবিতার জগৎ

 সখি পাতিসনে শিলাতলে পদ্মপাতা,    সখি দিসনে গোলাব-ছিটে খাস্‌ লো মাথা!    যার অন্তরে ক্রন্দন    করে হৃদি মন্থন    তারে হরি-চন্দন    কমলী মালা-    সখি দিসনে লো দিসনে লো, বড় সে জ্বালা!    বল কেমনে নিবাই সখি বুকের আগুন!    এল খুন-মাখা তৃণ নিয়ে খু’নেরা ফাগুন!    সে যেন হানে হুল্-খুনসুড়ি,    ফেটে পড়ে ফুলকুঁড়ি    আইবুড়ো আইবুড়ো    বুকে ধরে ঘুণ!    যত বিরহিণী নিম্‌-খুন-কাটা ঘায়ে নুন!        আজ লাল-পানি পিয়ে দেখি সব-কিছু  চুর!    সবে আতর বিলায় বায়ু বাতাবি নেবুর!    হ’ল মাদার আশোক ঘা’ল,    রঙন তো নাজেহাল!    লালে লাল ডালে-ডাল    পলাশ শিমুল!    সখি তাহাদের মধু ক্ষরে-মোরে বেঁধে হুল্!        নব সহকার-মঞ্জরী সহ ভ্রমরী!    চুমে ভোমরা নিপট, হিয়া মরে গুমরি’।    কত ঘাটে ঘাটে সই-সই    ঘট ভরে নিতি ওই,    চোখে ম...

ধূ-বরণ কবিতা - কাজী নজরুল ইসলাম | kobitar jagot

 এতদিন ছিলে ভূবনের তুমি    আজ ধরা দিলে ভবনে,    নেমে এলে আজ ধরার ধূলাতে    ছিলে এতদিন স্বপনে!    শুধু শোভাময়ী ছিলে এত দিন    কবির মানসে কলিকা নলিন,    আজ পরশিলে চিত্ত- পুলিন    বিদায় গোধূলি- লগনে।    ঊষার ললাট-সিন্দুর-টিপ    সিথিঁতে উড়াল পবনে।।     প্রভাতে ঊষা কুমারী, সেজেছে    সন্ধ্যায় বধূ ঊষসী,    চন্দন- টোপা- তারা- কলঙ্কে    ভ'রেছে বে-দাগ- মু'শশী।    মুখর মুখ আর বাচাল নয়ন    লাজ সুখে আজ যাচে গুন্ঠন,    নোটন- কপোতি কন্ঠে এখন    কূজন উঠিছে উছসি'।    এতদিন ছিলে শুধু রূপ- কথা,    আজ হ'লে বধূ রূপসী।।        দোলা চঞ্চল ছিল এই গেহ    তব লটপট বেণী ঘা'য়,    তারি সঞ্চিত আনন্দে ঝলে    ঐ ঊর- হার মনিকায়।    এ ঘরের হাসি নিয়ে যাও চোখে,    সে গৃহ- দ্বীপ জ্বেলো এ আলোকে,    চোখের সলিল থাকুক এ-লোকে-    আজ...

অভিযান কবিতা - কাজী নজরুল ইসলাম | কবিতার জগৎ

 নতুন পথের যাত্রা-পথিক    চালাও অভিযান!    উচ্চ কণ্ঠে উচ্চার আজ -    “মানুষ মহীয়ান!”     চারদিকে আজ ভীরুর মেলা,    খেলবি কে আর নতুন খেলা?    জোয়ার জলে ভাসিয়ে ভেলা    বাইবি কি উজান?    পাতাল ফেড়ে চলবি মাতাল    স্বর্গে দিবি টান্।।        সরল সাজের নাইরে সময়    বেরিয়ে তোরা আয়,    আজ বিপদের পরশ নেব    নাঙ্গা আদুল গায়।        আসবে রণ-সজ্জা করে,    সেই আশায়ই রইলি সবে!    রাত পোহাবে প্রভাত হবে    গাইবে পাখি গান।    আয় বেরিয়, সেই প্রভাতে    ধরবি যারা তান।।        আঁধার ঘোরে আত্নঘাতী    যাত্র-পথিক সব    এ উহারে হানছে আঘাত    করছে কলরব!    অভিযানে বীর সেনাদল!    জ্বালাও মশাল, চল্ আগে চল্।    কুচকাওয়াজের বাজাও মাদল,    গাও প্রভাতের গান!       ...

রাখীবন্ধন কবিতা - কাজী নজরুল ইসলাম | কবিতার জগৎ

 সই পাতালো কি শরতে আজিকে স্নিগ্ধ আকাশ ধরণী?    নীলিমা বাহিয়া সওগাত নিয়া নামিছে মেঘের তরণী!    অলকার পানে বলাকা ছুটিছে, মেঘ-দূত- মন মোহিয়া!    চঞ্চুতে রাঙ্গা কল মীর কুঁড়ি- মরতের ভেট বহিয়া!    সখীর গাঁয়ের সেঁউতি- বোঁটার ফিরোজায় রেঙ্গে পেশোয়াজ    আসমানী আর মৃন্ময়ী সখী মিশিয়াছে মেঠো পথ- মাঝ!    আকাশ এনেছে কুয়াশা- উড়ুনী, আসমানী- নীল- কাঁচুলি,    তারকার টিপ, বিজলীর হার, দ্বিতীয় - চাঁদের হাঁসুলি!    ঝরা-বৃষ্টির ঝর ঝর আর পাপিয়া শ্যামের কূজনে    বাজে নহবত আকাশ ভূবনে- সই পাতিয়েছে দু'জনে!    আকাশের দাসী সমীরণ আনে শ্বেত পেঁজা- মেঘ ফেনা ফুল,    হেথা জলে থলে কুমুদে আলুথালু ধরা বেয়াকুল।    আকাশ-গাঙে কি বান ডেকেছে গো, গান গেয়ে চলে বরষা,    বিজুরীর গুণ টেনে টেনে চলে মেঘ- কুমারীরা হরষা।    হেথা মেঘ পানে কালো চোখ হানে মাটির কুমার মাঝিরা,    জল ছুড়ে মারে মেঘ-বালা দল, বলে- 'চাহে দেখ পাজীরা!'    কহিছে আকাশ, 'ওলো সই, তোর চকোরে পা...

'চাঁদনী-রাতে' কবিতা - কাজী নজরুল ইসলাম | কবিতার জগৎ

 কোদালে মেঘের মউজ উঠেছে গগনের নীল গাঙে,    হাবুডুবু খায় তারা-বুদবুদ, জোছনা সোনায় রাঙে!    তৃতীয়া চাঁদের সাম্পানে চড়ি চলিছে আকাশ প্রিয়া,    আকাশ-দরিয়া উতলা হ’ল গো পুতলায় বুকে নিয়া।    তৃতীয়া চাঁদের বাকি তের কলা আবছা কালোতে আঁকা    নীলিম-প্রিয়ার নীলা 'গুল রুখ' অব-গুণ্ঠনে ঢাকা।    সপ্তর্ষির তারা-পালঙ্কে ঘুমায় আকাশ-রাণী,    সেহেলি 'লায়লী' দিয়ে গেছে চুপে কূহেলী-মশারী টানি!    দিক-চক্রের ছায়া-ঘন ঐ সবুজ তরুর সারি,    নীহার-নেটের কুয়াশা মশারি –ওকি বর্ডার তারি?    সাতাশ তারার ফুল-তোড়া হাতে আকাশ নিশুতি রাতে    গোপনে আসিয়া তারা-পালঙ্কে শুইল প্রিয়ার সাথে!    উহু উহু করি কাঁচা ঘুম ভেঙে জেগে ওঠে নীলা হুরী,    লুকিয়ে দেখে তা 'চোখ গেল' বলে চেঁচায় পাপিয়া ছুঁড়ি!    'মঙ্গল' তারা মঙ্গল-দীপ জ্বালিয়া প্রহর জাগে,    ঝিকিমিকি করে মাঝে মাঝে- বুঝি বধূর নিশাস লাগে!    উল্কা-জ্বালার সন্ধানী-আলো লইয়া আকাশ-দ্বারী    ‘কাল...

পাপ কবিতা - কাজী নজরুল ইসলাম | কবিতার জগৎ

 সাম্যের গান গাই!-    যত পাপী তাপী সব মোর বোন, সব হয় মোর ভাই।    এ পাপ-মুলুকে পাপ করেনি করেনিক’ কে আছে পুরুষ-নারী?    আমরা ত ছার; পাপে পঙ্কিল পাপীদের কাণ্ডারী!    তেত্রিশ কোটি দেবতার পাপে স্বর্গ সে টলমল,    দেবতার পাপ-পথ দিয়া পশে স্বর্গে অসুর দল!    আদম হইতে শুরু ক’রে এই নজরুল তক্‌ সবে    কম-বেশী ক’রে পাপের ছুরিতে পুণ্য করেছে জবেহ্ !    বিশ্ব পাপস্থান    অর্ধেক এর ভগবান, আর অর্ধেক শয়তান্!    থর্মান্ধরা শোনো,    অন্যের পাপ গনিবার আগে নিজেদের পাপ গোনো!    পাপের পঙ্কে পুণ্য-পদ্ম, ফুলে ফুলে হেথা পাপ!    সুন্দর এই ধরা-ভরা শুধু বঞ্চনা অভিশাপ।    এদের এড়াতে না পারিয়া যত অবতার আদি কেহ    পুণ্যে দিলেন আত্মা ও প্রাণ, পাপেরে দিলেন দেহ।    বন্ধু, কহিনি মিছে,    ব্রহ্মা বিষ্ণু শিব হ’তে ধ’রে ক্রমে নেমে এস নীচে-    মানুষের কথা ছেড়ে দাও, যত ধ্যানী মুনি ঋষি যোগী    আত্মা তাঁদের ত্যাগী তপস্বী, দেহ তাঁহাদের ...

দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতা - কাজী নজরুল ইসলাম | kobitar jagot

 আসে নাই ফিরে ভারত-ভারতী    মা’র কতদিন দ্বীপান্তর?    পুণ্য বেদীর শূন্যে ধ্বনিল    ক্রন্দন-‘দেড় শত বছর।’….    সপ্ত সিন্ধু তের নদী পার    দ্বীপান্তরের আন্দামান,    রূপের কমল রূপার কাঠির    কঠিন স্পর্শে যেখানে ম্লান,    শতদল যেথা শতধা ভিন্ন    শস্ত্র-পাণির অস্ত্র-ঘাস,    যস্ত্রী যেখানে সাস্ত্রী বসায়ে    বীনার তন্ত্রী কাটিছে হায়,    সেখানে হ’তে কি বেতার-সেতার    এসেছে মুক্ত-বন্ধ সুরা?    মুক্ত কি আজ বন্দিনী বাণী?    ধ্বংস হ’ল কি বক্ষ-পুর?    যক্ষপুরীর রৌপ্য-পঙ্কে    ফুটিল কি তবে রূপ-কমল?    কামান গোলার সীসা-স্তুপে কি    উঠেছে বাণীর শিশ-মহল?    শান্তি-শুচিতে শুভ্র হ’ল কি    রক্ত সোঁদাল খুন-খারাব?    তবে এ কিসের আর্ত আরতি,    কিসের তরে এ শঙ্কারাব?…        সাত সমুদ্র তের নদী পার    দ্বীপান্তরের আন্দামান,    বাণী যে...

পথের দিশা কবিতা - কাজী নজরুল ইসলাম | কবিতার জগৎ

 চারিদিকে এই গুণ্ডা এবং বদমায়েসির আখ্‌ড়া দিয়ে    রে অগ্রদূত, চ’লতে কি তুই পারবি আপন প্রাণ বাঁচিয়ে?    পারবি যেতে ভেদ ক’রে এই বক্র-পথের চক্রব্যুহ?    উঠবি কি তুই পাষাণ ফুঁড়ে বনস্পতি মহীরুহ?    আজকে প্রাণের গো-ভাগাড়ে উড়ছে শুধু চিল-শকুনি,    এর মাঝে তুই আলোকে-শিশু কোন্‌ অভিযান ক’রবি, শুনি?    ছুঁড়ছে পাথর, ছিটায় কাদা, কদর্যের এই হোরি-খেলায়    শুভ্র মুখে মাখিয়ে কালি ভোজপুরীদের হট্ট-মেলায়    বাঙলা দেশও মাত্ল কি রে? তপস্যা তার ভুললো অরুণ?    তাড়িখানার চীৎকারে কি নাম্‌ল ধুলায় ইন্দ্র বরুণ?    ব্যগ্র-পরান অগ্রপথিক,কোন্‌ বাণী তোর শুনাতে সাধ?    মন্ত্র কি তোর শুন্‌তে দেবে নিন্দাবাদীর ঢক্কা-নিনাদ?        নর-নারী আজ কন্ঠ ছেড়ে কুৎসা-গানের কোরাস্ ধ’রে    ভাবছে তা’রা সুন্দরেরই জয়ধ্বনি ক’রছে জোরে?    এর মাঝে কি খবর পেলি নব-বিপ্লব-ঘোড়সাওয়ারী    আসছে কেহ? টুট্‌ল তিমির, খুল্‌ল দুয়ার পুব-দয়ারী?    ভগবান আজ ভূত হ...

'সত্য-কবি' কবিতা - কাজী নজরুল ইসলাম | kobitar jagot

 অসত্য যত রহিল পড়িয়া, সত্য যে গেল চ’লে    বীরের মতন মরণ-কারারে চরণের তলে দ’লে।    যে-ভোরের তারা অরুণ-রবির উদয়-তোরণ-দোরে    ঘোষিল বিজয়-কিরণ-শঙ্খ-আবার প্রথম ভোরে,    রবির ললাট চুম্বিল যার প্রথম রশ্মি-টীকা,    বাদলের বায়ে নিভে গেল হায় দীপ্ত তাহারি শিখা!    মধ্য গগনে স্তব্ধ নিশীথ, বিশ্ব চেতন-হারা,    নিবিড় তিমির, আকাশ ভাঙিয়া ঝরিছে আকুল-ধারা    গ্রহ শশী তারা কেউ জেগে নাই, নিভে গেছে সব বাতি,    হাঁক দিয়া ফেরে ঝড়- তুফানের উতরোল মাতামাতি!        হেন দুর্দিনে বেদনা-শিখার বিজলি-প্রদীপ জ্বেলে    কাহারে খুঁজিতে কে তুমি নিশীথ-গগন-আঙনে এলে?    বারে বারে তব দীপ নিভে যায়, জ্বালো তুমি বারে বারে,    কাঁদন তোমার সে যেন বিশ্বপিতারে চাবুক মারে!    কি ধন খুঁজিছ? কে তুমি সুনীল মেঘ-অবগন্ঠিতা?    তুমি কি গো সেই সবুজ শিখার কবির দীপাম্বীতা?    কি নেবে গো আর? ঐ নিয়ে যাও চিতার দু-মুঠো ছাই!    ডাক দিয়ো না ক’, মূর্ছিত...