Posts

Showing posts with the label জসীম উদ্দীন

সকিনা কবিতা - জসীম উদ্দীন || কবিতার জগৎ

 দুখের সায়রে সাঁতারিয়া আজ সকিনার তরীখানি,    ভিড়েছে যেখানে, সেতা নাই কূল, শুধুই অগাধ পানি।    গরীবের ঘরে জন্ম তাহার, বয়স বাড়িতে হায়,    কিছু বাড়িল না, একরাশ রূপ জড়াইল শুধু গায়।    সেই রূপই তার শত্রু হইল, পন্যের মত তারে,    বিয়ে দিল বাপ দুই মুঠি ভরি টাকা আধুলির ভারে!        খসম তাহার দাগী-চোর, রাতে রহিত না ঘরে,    হেথায় হোথায় ঘুরিয়া ফিরিত সিদকাঠি হাতে করে।    সারাটি দিবস পড়িয়া ঘুমাত, সকিনার সনে তার,    দেখা যে হইত ক্ষনেকের তরে, মাসে দুই একবার।    সেই কোন তার কল্পিত এক এপরাধ ভেবে মনে,    মারিবার যবে হত প্রয়োজন অতীব ক্রোধের সনে।    এমন স্বামীর বন্ধন ছাড়ি বহু হাত ঘুরি ফিরি,    দুঃখের জাল মেলে সে চলিল জীবনের নদী ঘিরি।    সে সব কাহিনী বড় নিদারুন, মোড়লের দরবার,    উকিলের বাড়ি, থানার হাজত, রাজার কাছারী আর;    ঘন পাট ক্ষেত, দূর বেত ঝাড়, গহন বনের ছায়,    সাপের খোড়লে, বাঘের গুহায় কাটাতে ...

বঙ্গ-বন্ধু কবিতা - জসীম উদ্দীন || কবিতার জগৎ

 মুজিবর রহমান।    ওই নাম যেন বিসুভিয়াসের অগ্নি-উগারী বান।    বঙ্গদেশের এ প্রান্ত হতে সকল প্রান্ত ছেয়ে,    জ্বালায় জ্বলিছে মহা-কালানল ঝঞঝা-অশনি বেয়ে ।    বিগত দিনের যত অন্যায় অবিচার ভরা-মার।    হৃদয়ে হৃদয়ে সঞ্চিত হয়ে সহ্যে অঙ্গার ;    দিনে দিনে হয়ে বর্ধিত স্ফীত শত মজলুম বুকে,    দগ্ধিত হয়ে শত লেলিহান ছিল প্রকাশের মুখে ;    তাহাই যেন বা প্রমূর্ত হয়ে জ্বলন্ত শিখা ধরি    ওই নামে আজ অশনি দাপটে ফিরিছে ধরণী ভরি।        মুজিবর রহমান।    তব অশ্বেরে মোদের রক্তে করায়েছি পূত-স্নান।    পীড়িত-জনের নিশ্বাস তারে দিয়েছে চলার গতি,    বুলেটে নিহত শহীদেরা তার অঙ্গে দিয়েছে জ্যেতি।    দুর্ভিক্ষের দানব তাহারে অদম্য বল,    জঠরে জঠরে অনাহার-জ্বালা করে তারে চঞ্চল।    শত ক্ষতে লেখা অমর কাব্য হাসপাতালের ঘরে,    মুর্হুমুহু যে ধবনিত হইছে তোমার পথের পরে।    মায়ের বুকের ভায়ের বুকের বোনের বুকের জ্বালা, ...

আমার বাড়ি কবিতা - জসীম উদ্দীন | কবিতার জগৎ

আমার বাড়ি যাইও ভোমর,    বসতে দেব পিঁড়ে,    জলপান যে করতে দেব    শালি ধানের চিঁড়ে।    শালি ধানের চিঁড়ে দেব,    বিন্নি ধানের খই,    বাড়ির গাছের কবরী কলা,    গামছা-বাঁধা দই।    আম-কাঁঠালের বনের ধারে    শুয়ো আঁচল পাতি,    গাছের শাখা দুলিয়ে বাতাস    করব সারা রাতি।    চাঁদমুখে তোর চাঁদের চুমো    মাখিয়ে দেব সুখে    তারা ফুলের মালা গাঁথি,    জড়িয়ে দেব বুকে।    গাই দোহনের শব্দ শুনি    জেগো সকাল বেলা,    সারাটা দিন তোমায় লয়ে    করব আমি খেলা।    আমার বাড়ি ডালিম গাছে    ডালিম ফুলের হাসি,    কাজলা দীঘির কাজল জলে    কাঁসগুলি যায় ভাসি।    আমার বাড়ি যাইও ভোমর,    এই বরাবর পথ,    মৌরী ফুলের গন্ধ শুঁকে    থামিও তব রথ।

আসমানী কবিতা - জসীম উদ্দীন | কবিতার জগৎ

 আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও,    রহিমদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও।    বাড়ি তো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি,    একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি।    একটুখানি হাওয়া দিলেই ঘর নড়বড় করে,    তারি তলে আসমানীরা থাকে বছর ভরে।    পেটটি ভরে পায় না খেতে, বুকের ক-খান হাড়,    সাক্ষী দিছে অনাহারে কদিন গেছে তার।    মিষ্টি তাহার মুখটি হতে হাসির প্রদীপ-রাশি    থাপড়েতে নিবিয়ে দেছে দারুণ অভাব আসি।    পরনে তার শতেক তালির শতেক ছেঁড়া বাস,    সোনালি তার গা বরণের করছে উপহাস।    ভোমর-কালো চোখ দুটিতে নাই কৌতুক-হাসি,    সেখান দিয়ে গড়িয়ে পড়ে অশ্রু রাশি রাশি।    বাঁশির মতো সুরটি গলায় ক্ষয় হল তাই কেঁদে,    হয় নি সুযোগ লয় যে সে-সুর গানের সুরে বেঁধে।    আসমানীদের বাড়ির ধারে পদ্ম-পুকুর ভরে    ব্যাঙের ছানা শ্যাওলা-পানা কিল্-বিল্-বিল করে।    ম্যালেরিয়ার মশক সেথা বিষ গুলিছে জলে,    সেই জলেতে রান্না-খাওয়া আসমানীদের চলে। ...

রাখাল ছেলে কবিতা - জসীম উদ্দীন | কবিতার জগৎ

 'রাখাল ছেলে! রাখাল ছেলে! বারেক ফিরে চাও,    বাঁকা গাঁয়ের পথটি বেয়ে কোথায় চলে যাও?'       'ওই যে দেখ নীল-নোয়ান সবুজ ঘেরা গাঁ    কলার পাতা দোলায় চামর শিশির ধোয়ায় পা;    সেথায় আছে ছোট্ট কুটির সোনার পাতায় ছাওয়া,    সেই ঘরেতে একলা বসে ডাকছে আমার মা    সেথায় যাব, ও ভাই এবার আমায় ছাড় না!'       রাখাল ছেলে! রাখাল ছেলে! আবার কোথায় ধাও,    পূব আকাশে ছাড়ল সবে রঙিন মেঘের নাও।'       'ঘুম হতে আজ জেগেই দেখি শিশির-ঝরা ঘাসে,    সারা রাতের স্বপন আমার মিঠেল রোদে হাসে।    আমার সাথে করতে খেলা প্রভাত হাওয়া ভাই,    সরষে ফুলের পাঁপড়ি নাড়ি ডাকছে মোরে তাই।    চলতে পথে মটরশুঁটি জড়িয়ে দু-খান পা,    বলছে ডেকে, 'গাঁয়ের রাখাল একটু খেলে যা!'    সারা মাঠের ডাক এসেছে, খেলতে হবে ভাই!    সাঁঝের বেলা কইব কথা এখন তবে যাই!'       'রাখাল ছেলে! রাখাল ছেলে! সারাটা দিন খেলা,    এ যে বড় বাড়াবাড়ি, কাজ আছে যে...

মামার বাড়ি কবিতা - জসীম উদ্দীন | কবিতার জগৎ

 আয় ছেলেরা, আয় মেয়েরা,    ফুল তুলিতে যাই    ফুলের মালা গলায় দিয়ে    মামার বাড়ি যাই।    মামার বাড়ি পদ্মপুকুর    গলায় গলায় জল,    এপার হতে ওপার গিয়ে    নাচে ঢেউয়ের দল।       দিনে সেথায় ঘুমিয়ে থাকে    লাল শালুকের ফুল,    রাতের বেলা চাঁদের সনে    হেসে না পায় কূল।    আম-কাঁঠালের বনের ধারে    মামা-বাড়ির ঘর,    আকাশ হতে জোছনা-কুসুম    ঝরে মাথার ‘পর।       রাতের বেলা জোনাক জ্বলে    বাঁশ-বাগানের ছায়,    শিমুল গাছের শাখায় বসে    ভোরের পাখি গায়।    ঝড়ের দিনে মামার দেশে    আম কুড়াতে সুখ    পাকা জামের শাখায় উঠি    রঙিন করি মুখ।    কাঁদি-ভরা খেজুর গাছে    পাকা খেজুর দোলে    ছেলেমেয়ে, আয় ছুটে যাই    মামার দেশে চলে। 

প্রতিদান কবিতা - জসীম উদ্দীন | কবিতার জগৎ

 আমার এ ঘর ভাঙ্গিয়াছে যেবা, আমি বাধি তার ঘর,    আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর।    যে মোরে করিল পথের বিবাগী;    পথে পথে আমি ফিরি তার লাগি;    দীঘল রজনী তার তরে জাগি ঘুম যে হয়েছে মোর;    আমার এ ঘর ভাঙ্গিয়াছে যেবা, আমি বাধি তার ঘর।       আমার একুল ভাঙ্গিয়াছে যেবা আমি তার কুল বাধি,    যে গেছে বুকেতে আঘাত হানিয়া তার লাগি আমি কাঁদি;    সে মোরে দিয়েছে বিষ ভরা বান,    আমি দেই তারে বুক ভরা গান;    কাটা পেয়ে তারে ফুল করি দান সারাটি জনম ভর,    আপন করিতে কাদিঁয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর।    মোর বুকে যেবা কবর বেধেছে আমি তার বুক ভরি,    রঙ্গীন ফুলের সোহাগ জড়ান ফুল মালঞ্চ ধরি।    যে মুখে সে নিঠুরিয়া বাণী,    আমি লয়ে সখী, তারি মুখ খানি,    কত ঠাই হতে কত কি যে আনি, সাজাই নিরন্তর,    আপন করিতে কাদিয়া বেড়াই যে মোরে করিয়াছে পর। 

নিমন্ত্রণ কবিতা - জসীম উদ্দীন | কবিতার জগৎ

 তুমি যাবে ভাই – যাবে মোর সাথে, আমাদের ছোট গাঁয়,    গাছের ছায়ায় লতায় পাতায় উদাসী বনের বায়;    মায়া মমতায় জড়াজড়ি করি    মোর গেহখানি রহিয়াছে ভরি,    মায়ের বুকেতে, বোনের আদরে, ভাইয়ের স্নেহের ছায়,    তুমি যাবে ভাই – যাবে মোর সাথে, আমাদের ছোট গাঁয়,       ছোট গাঁওখানি- ছোট নদী চলে, তারি একপাশ দিয়া,    কালো জল তার মাজিয়াছে কেবা কাকের চক্ষু নিয়া;    ঘাটের কিনারে আছে বাঁধা তরী    পারের খবর টানাটানি করি;    বিনাসুতি মালা গাথিছে নিতুই এপার ওপার দিয়া;    বাঁকা ফাঁদ পেতে টানিয়া আনিছে দুইটি তটের হিয়া।       তুমি যাবে ভাই- যাবে মোর সাথে, ছোট সে কাজল গাঁয়,    গলাগলি ধরি কলা বন; যেন ঘিরিয়া রয়েছে তায়।    সরু পথ খানি সুতায় বাঁধিয়া    দূর পথিকেরে আনিছে টানিয়া,    বনের হাওয়ায়, গাছের ছায়ায়, ধরিয়া রাখিবে তায়,    বুকখানি তার ভরে দেবে বুঝি, মায়া আর মমতায়!       তুমি যাবে ভাই যাবে মোর সাথে – নরম ঘাসের...

কবর কবিতা - জসীম উদ্দীন | কবিতার জগৎ

 এই খানে তোর দাদির কবর ডালিম-গাছের তলে,    তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে।    এতটুকু তারে ঘরে এনেছিনু সোনার মতন মুখ,    পুতুলের বিয়ে ভেঙে গেল বলে কেঁদে ভাসাইত বুক।    এখানে ওখানে ঘুরিয়া ফিরিতে ভেবে হইতাম সারা,    সারা বাড়ি ভরি এত সোনা মোর ছড়াইয়া দিল কারা!    সোনালি ঊষার সোনামুখ তার আমার নয়নে ভরি    লাঙল লইয়া খেতে ছুটিলাম গাঁয়ের ও-পথ ধরি।    যাইবার কালে ফিরে ফিরে তারে দেখে লইতাম কত    এ কথা লইয়া ভাবি-সাব মোরে তামাশা করিত শত।    এমনি করিয়া জানি না কখন জীবনের সাথে মিশে    ছোট-খাট তার হাসি ব্যথা মাঝে হারা হয়ে গেনু দিশে।       বাপের বাড়িতে যাইবার কাল কহিত ধরিয়া পা    আমারে দেখিতে যাইও কিন্তু উজান-তলীর গাঁ।    শাপলার হাটে তরমুজ বেচি পয়সা করি দেড়ী,    পুঁতির মালার একছড়া নিতে কখনও হত না দেরি।    দেড় পয়সার তামাক এবং মাজন লইয়া গাঁটে,    সন্ধাবেলায় ছুটে যাইতাম শ্বশুরবাড়ির বাটে!    হেস না¬ হে...

মামার বাড়ি - জসীম উদ্দীন

Image