ফাল্গুনী কবিতা - কাজী নজরুল ইসলাম | কবিতার জগৎ

 সখি পাতিসনে শিলাতলে পদ্মপাতা,  

 সখি দিসনে গোলাব-ছিটে খাস্‌ লো মাথা!  

 যার অন্তরে ক্রন্দন  

 করে হৃদি মন্থন  

 তারে হরি-চন্দন  

 কমলী মালা-  

 সখি দিসনে লো দিসনে লো, বড় সে জ্বালা!  

 বল কেমনে নিবাই সখি বুকের আগুন!  

 এল খুন-মাখা তৃণ নিয়ে খু’নেরা ফাগুন!  

 সে যেন হানে হুল্-খুনসুড়ি,  

 ফেটে পড়ে ফুলকুঁড়ি  

 আইবুড়ো আইবুড়ো  

 বুকে ধরে ঘুণ!  

 যত বিরহিণী নিম্‌-খুন-কাটা ঘায়ে নুন!   

  

 আজ লাল-পানি পিয়ে দেখি সব-কিছু  চুর!  

 সবে আতর বিলায় বায়ু বাতাবি নেবুর!  

 হ’ল মাদার আশোক ঘা’ল,  

 রঙন তো নাজেহাল!  

 লালে লাল ডালে-ডাল  

 পলাশ শিমুল!  

 সখি তাহাদের মধু ক্ষরে-মোরে বেঁধে হুল্!   

  

 নব সহকার-মঞ্জরী সহ ভ্রমরী!  

 চুমে ভোমরা নিপট, হিয়া মরে গুমরি’।  

 কত ঘাটে ঘাটে সই-সই  

 ঘট ভরে নিতি ওই,  

 চোখে মুখে ফোটে খই,-  

 আব-রাঙা গাল,  

 যত আধ-ভাঙা ইঙ্গিত তত হয় লাল!   

  

 আর সইতে পারিনে সই ফুল-ঝামেলা!  

 প্রাতে মল্লী চাঁপা, সাঁজে বেলা চামেলা!  

 হের ফুটবো মাধী হুরী  

 ডগমগ তরুপুরী,  

 পথে পথে ফুলঝুরি  

 সজিনা ফুলে!  

 এত ফুল দেখে কুলবালা কূল না ভুলে!   

  

 সাজি’ বাটা-ভরা ছাঁচিপান ব্যজনী-হাতে  

 করে স্বজনে বীজন কত সজনী ছাতে!  

 সেথা চোখে চোখে সঙ্কেত  

 কানে কথা-যাও ধেৎ,-  

 ঢ’লে-পড়া অঙ্কেতে  

 মন্‌মথ-ঘায়!  

 আজ আমি ছাড়া আর সবে মন-মত পায়।   

  

 সখি মিষ্টি ও ঝাল মেশা এল এ কি বায়!  

 এ যে বুক যত জ্বালা করে মুখ তত চায়!  

 এযে শরাবের মতো নেশা  

 এ পোড়া মলয় মেশা,  

 ডাকে তাহে কুলনাশা  

 কালামুখো পিক।  

 যেন কাবাব করিতে বেঁধে কলিজাতে শিক্!   

  

 এল আলো-রাধা ফাগ ভরি’ চাঁদের থালায়  

 ঝরে জোছনা-আবীর সারা শ্যাম সুষমায়!  

 যত ডাল-পালা নিম্‌খুন,  

 ফুলে ফুলে কুঙ্কুম্,  

 চুড়ি বালা রুম্‌ঝুম,  

 হোরির খেলা,  

 শুধু নিরালায় কেঁদে মরি আমি একেলা!   

  

 আজ সঙ্কেত-শঙ্কিত বন-বীথিকায়  

 কত কুলবধূ ছিঁড়ে শাড়ি কুলের কাঁটায়!  

 সখি ভরা মোর এ দু’কুল  

 কাঁটাহীন শুধু ফুল!  

 ফুলে এত বেঁধে হুল?  

 ভালো ছিল হায়,  

 সখি ছিঁড়িত দু’কূল যদি কুলের কাঁটায়! 

Comments

Popular posts from this blog

আমার বাড়ি কবিতা - জসীম উদ্দীন | কবিতার জগৎ