'চাঁদনী-রাতে' কবিতা - কাজী নজরুল ইসলাম | কবিতার জগৎ

 কোদালে মেঘের মউজ উঠেছে গগনের নীল গাঙে,  

 হাবুডুবু খায় তারা-বুদবুদ, জোছনা সোনায় রাঙে!  

 তৃতীয়া চাঁদের সাম্পানে চড়ি চলিছে আকাশ প্রিয়া,  

 আকাশ-দরিয়া উতলা হ’ল গো পুতলায় বুকে নিয়া।  

 তৃতীয়া চাঁদের বাকি তের কলা আবছা কালোতে আঁকা  

 নীলিম-প্রিয়ার নীলা 'গুল রুখ' অব-গুণ্ঠনে ঢাকা।  

 সপ্তর্ষির তারা-পালঙ্কে ঘুমায় আকাশ-রাণী,  

 সেহেলি 'লায়লী' দিয়ে গেছে চুপে কূহেলী-মশারী টানি!  

 দিক-চক্রের ছায়া-ঘন ঐ সবুজ তরুর সারি,  

 নীহার-নেটের কুয়াশা মশারি –ওকি বর্ডার তারি?  

 সাতাশ তারার ফুল-তোড়া হাতে আকাশ নিশুতি রাতে  

 গোপনে আসিয়া তারা-পালঙ্কে শুইল প্রিয়ার সাথে!  

 উহু উহু করি কাঁচা ঘুম ভেঙে জেগে ওঠে নীলা হুরী,  

 লুকিয়ে দেখে তা 'চোখ গেল' বলে চেঁচায় পাপিয়া ছুঁড়ি!  

 'মঙ্গল' তারা মঙ্গল-দীপ জ্বালিয়া প্রহর জাগে,  

 ঝিকিমিকি করে মাঝে মাঝে- বুঝি বধূর নিশাস লাগে!  

 উল্কা-জ্বালার সন্ধানী-আলো লইয়া আকাশ-দ্বারী  

 ‘কাল-পুরুষ’ সে জাগি বিনিদ্র করিতেছে পায়চারি!   

  

 সেহেলিরা রাতে পালায়ে এসেছে উপবনে কোন আশে,  

 হেথা হোথা ছোটে-পিকের কণ্ঠে ফিক ফিক ক’রে হাসে!  

 আবেগে সোহাগে আকাশ-প্রিয়ার চিবুক বাহিয়া ও কি  

 শিশিরের রূপে ঘর্ম-বিন্দু ঝ’রে ঝরে পড়ে সখি,  

 নবমী চাঁদের ‘সসারে’ ও কে গো চাঁদিনী-শিরাজি ঢালি’  

 বধূর অধর ধরিয়া কহিছে- ‘তহুরা পিও লো আলি’!  

 কার কথা ভেবে তারা-মজলিসে দূরে একাকিনী সাকী  

 চাঁদের ‘সসারে’ কলঙ্ক-ফুল আনমনে যায় আঁকি।  

 ফরহাদ-শিরী-লায়লী-মজনু মগজে ক’রেছে চিড়,  

 মস্তানা শ্যামা দধিয়াল টানে বায়ু-বেয়ালার মীড়!  

 আনমনা সাকী! অমনি আমারো হৃদয় পেয়ালা-কোণে  

 কলঙ্ক-ফুল আনমনে সখি লিখো মুছো ক্ষণে ক্ষণে । 

Comments

Popular posts from this blog

আমার বাড়ি কবিতা - জসীম উদ্দীন | কবিতার জগৎ