Posts

Showing posts from January, 2021

পুজার সাজ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | kobitar jagot

 আশ্বিনের মাঝামাঝি উঠিল বাজনা বাজি,    পূজার সময় এল কাছে।    মধু বিধু দুই ভাই ছুটাছুটি করে তাই    আনন্দে দু হাত তুলি নাচে।       পিতা বসি ছিল দ্বারে; দুজনে শুধালো তারে,    'কী পোশাক আনিয়াছ কিনে।'    পিতা কহে, 'আছে আছে তোদের মায়ের কাছে,    দেখিতে পাইবি ঠিক দিনে।'       সবুর সহে না আর - জননীরে বার বার    কহে, 'মা গো, ধরি তোর পায়ে,    বাবা আমাদের তরে কী কিনে এনেছে ঘরে    একবার দে-না, মা, দেখায়ে।'    ব্যস্ত দেখি হাসিয়া মা দুখানি ছিটের জামা    দেখাইল করিয়া আদর ।    মধু কহে, 'আর নেই?' মা কহিল, 'আছে এই    একজোড়া ধুতি ও চাদর।'       রাগিয়া আগুন ছেলে - কাপড় ধুলায় ফেলে    কাঁদিয়া কহিল, 'চাহি না মা!    রায়বাবুদের গুপি পেয়েছে জরির টুপি    ফুলকাটা সাটিনের জামা।'    মা কহিল, 'মধু, ছি ছি, কেন কাঁদ মিছামিছি!    গরিব যে তোমাদের বাপ।    এবা...

পুরস্কার কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | kobitar jagot

 সেদিন বরষা ঝরঝর ঝরে    কহিল কবির স্ত্রী    'রাশি রাশি মিল করিয়াছ জড়ো,    রচিতেছ বসি পুঁথি বড়ো বড়ো,    মাথার উপরে বাড়ি পড়ো-পড়ো,    তার খোঁজ রাখ কি!    গাঁথিছ ছন্দ দীর্ঘ হ্রস্ব---    মাথা ও মুণ্ড, ছাই ও ভস্ম,    মিলিবে কি তাহে হস্তী অশ্ব,    না মিলে শস্যকণা।    অন্ন জোটে না, কথা জোটে মেলা,    নিশিদিন ধ'রে এ কি ছেলেখেলা!    ভারতীরে ছাড়ি ধরো এইবেলা    লক্ষ্মীর উপাসনা।    ওগো, ফেলে দাও পুঁথি ও লেখনী,    যা করিতে হয় করহ এখনি।    এত শিখিয়াছ এটুকু শেখ নি    কিসে কড়ি আসে দুটো!'    দেখি সে মুরতি সর্বনাশিয়া    কবির পরান উঠিল ত্রাসিয়া,    পরিহাসছলে ঈষত্ হাসিয়া    কহে জুড়ি করপুট,    'ভয় নাহি করি ও মুখ-নাড়ারে,    লক্ষ্মী সদয় লক্ষ্মীছাড়ারে,    ঘরেতে আছেন নাইকো ভাঁড়ারে    এ কথা শুনিবে কেবা!    আমার কপালে বিপরীত ফল--- ...

ন্যায়দন্ড কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | কবিতার জগৎ

 তোমার ন্যায়ের দণ্ড প্রত্যেকের করে    অর্পণ করেছ নিজে। প্রত্যেকের ’পরে    দিয়েছ শাসনভার হে রাজাধিরাজ।    সে গুরু সম্মান তব সে দুরূহ কাজ    নমিয়া তোমারে যেন শিরোধার্য করি    সবিনয়ে। তব কার্যে যেন নাহি ডরি    কভু কারে।       ক্ষমা যেথা ক্ষীণ দুর্বলতা,    হে রুদ্র, নিষ্ঠুর যেন হতে পারি তথা    তোমার আদেশে। যেন রসনায় মম    সত্যবাক্য ঝলি উঠে খরখড়্গসম    তোমার ইঙ্গিতে। যেন রাখি তব মান    তোমার বিচারাসনে লয়ে নিজ স্হান।       অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে    তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে।

নিদ্রিতা কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | kobitar jagot

 একদা রাতে নবীন যৌবনে    স্বপ্ন হতে উঠিনু চমকিয়া,    বাহিরে এসে দাঁড়ানু একবার---    ধরার পানে দেখিনু নিরখিয়া ।    শীর্ণ হয়ে এসেছে শুকতারা,    পূর্বতটে হতেছে নিশিভোর ।    আকাশকোণে বিকাশে জাগরণ,    ধরণীতলে ভাঙে নি ঘুমঘোর ।    সমুখে প'ড়ে দীর্ঘ রাজপথ,    দু ধারে তারি দাঁড়ায়ে তরুসার,    নয়ন মেলি সুদূর-পানে চেয়ে    আপন-মনে ভাবিনু একবার---    অরুণ-রাঙা আজি এ নিশিশেষে    ধরার মাঝে নূতন কোন্ দেশে    দুগ্ধফেনশয়ন করি আলা    স্বপ্ন দেখে ঘুমায়ে রাজবালা ।।       অশ্ব চড়ি তখনি বাহিরিনু,    কত যে দেশ বিদেশ হনু পার !    একদা এক ধূসরসন্ধ্যায়    ঘুমের দেশে লভিনু পুরদ্বার ।    সবাই সেথা অচল অচেতন,    কোথাও জেগে নাইকো জনপ্রাণী,    নদীর তীরে জলের কলতানে    ঘুমায়ে আছে বিপুল পুরীখানি ।    ফেলিতে পদ সাহস নাহি মানি,    নিমেষে পাছে সকল দেশ...

দুই বিঘা জমি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | কবিতার জগৎ

 শুধু বিঘে-দুই ছিল মোর ভুঁই, আর সবই গেছে ঋণে।    বাবু বলিলেন, 'বুঝেছ উপেন? এ জমি লইব কিনে।'    কহিলাম আমি, 'তুমি ভূস্বামী, ভূমির অন্ত নাই -    চেয়ে দেখো মোর আছে বড়জোর মরিবার মতো ঠাঁই।    শুনি রাজা কহে, 'বাপু, জানো তো হে, করেছি বাগানখানা,    পেলে দুই বিঘে প্রস্থে ও দিঘে সমান হইবে টানা -    ওটা দিতে হবে।' কহিলাম তবে বক্ষে জুড়িয়া পাণি    সজল চক্ষে, 'করুন রক্ষে গরিবের ভিটেখানি।    সপ্তপুরুষ যেথায় মানুষ সে মাটি সোনার বাড়া,    দৈন্যের দায়ে বেচিব সে মায়ে এমনি লক্ষ্মীছাড়া!'    আঁখি করি লাল রাজা ক্ষণকাল রহিল মৌনভাবে,    কহিলেন শেষে ক্রুর হাসি হেসে, 'আচ্ছা, সে দেখা যাবে।'       পরে মাস-দেড়ে ভিটে মাটি ছেড়ে বাহির হইনু পথে -    করিল ডিক্রি, সকলই বিক্রি মিথ্যা দেনার খতে।    এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভূরি ভূরি,    রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।    মনে ভাবিলাম, মোরে ভগবান রাখিবে না মোহগর্তে,    ...

দায়মোচন কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | কবিতার জগৎ

 চিরকাল রবে মোর প্রেমের কাঙাল,    এ কথা বলিতে চাও বোলো।    এই ক্ষণটুকু হোক সেই চিরকাল -    তার পরে যদি তুমি ভোল    মনে করাব না আমি শপথ তোমার,    আসা যাওয়া দু দিকেই খোলা রবে দ্বার -    যাবার সময় হলে যেয়ো সহজেই,    আবার আসিতে হয় এসো।    সংশয় যদি রয় তাহে ক্ষতি নেই,    তবু ভালোবাস যদি বেসো।।       বন্ধু, তোমার পথ সম্মুখে জানি,    পশ্চাতে আমি আছি বাঁধা।    অশ্রুনয়নে বৃথা শিরে কর হানি    যাত্রায় নাহি দিব বাধা।    আমি তব জীবনের লক্ষ্য তো নহি,    ভুলিতে ভুলিতে যাবে হে চিরবিরহী,    তোমার যা দান তাহা রহিবে নবীন    আমার স্মৃতির আঁখিজলে -    আমার যা দান সেও জেনো চিরদিন    রবে তব বিস্মৃতিতলে।।       দূরে চলে যেতে যেতে দ্বিধা করি মনে    যদি কভু চেয়ে দেখ ফিরে,    হয়তো দেখিবে আমি শূন্য শয়নে -    নয়ন সিক্ত আঁখিনীরে।    মার্জনা কর য...

ঝুলন কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | kobitarjagot

 আমি পরানের সাথে খেলিব আজিকে মরণখেলা    নিশীথবেলা।    সঘন বরষা, গগন আঁধার    হেরো বারিধারে কাঁদে চারিধার---    ভীষণ রঙ্গে ভবতরঙ্গে ভাসাই ভেলা;    বাহির হয়েছি স্বপ্নশয়ন করিয়া হেলা    রাত্রিবেলা॥       ওগো,পবনে গগনে সাগরে আজিকে কী কল্লোল!    দে দোল্ দোল্।    পশ্চাত্ হতে হাহা ক'রে হাসি    মত্ত ঝটিকা ঠেলা দেয় আসি,    যেন এ লক্ষ যক্ষশিশুর অট্টরোল।    আকাশে পাতালে পাগলে মাতালে হট্টগোল!    দে দোল্ দোল্।       আজি জাগিয়া উঠিয়া পরান আমার বসিয়া আছে    বুকের কাছে।    থাকিয়া থাকিয়া উঠিছে কাঁপিয়া,    ধরিছে আমার বক্ষ চাপিয়া,    নিঠুর নিবিড় বন্ধনসুখে হৃদয় নাচে;    ত্রাসে উল্লাসে পরান আমার ব্যাকুলিয়াছে    বুকের কাছে॥       হায়, এতকাল আমি রেখেছিনু তারে যতনভরে    শয়ন-'পরে।    ব্যথা পাছে লাগে---- দুখ পাছে জাগে    নিশিদি...

ঝড়ের দিনে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | kobitar jagot

 আজি এই আকুল আশ্বিনে    মেঘে-ঢাকা দুরন্ত দুর্দিনে    হেমন্ত-ধানের খেতে বাতাস উঠেছে মেতে,    কেমনে চলিবে পথ চিনে?    আজি এই দুরন্ত দুর্দিনে!       দেখিছ না ওগো সাহসিকা,    ঝিকিমিকি বিদ্যুতের শিখা!    মনে ভেবে দেখো তবে এ ঝড়ে কি বাঁধা রবে    কবরীর শেফালিমালিকা।    ভেবে দেখো ওগো সাহসিকা!       আজিকার এমন ঝঞ্ঝায়    নূপুর বাঁধে কি কেহ পায়?    যদি আজি বৃষ্টির জল ধুয়ে দেয় নীলাঞ্চল    গ্রামপথে যাবে কি লজ্জায়    আজিকার এমন ঝঞ্ঝায়?       হে উতলা শোনো কথা শোনো,    দুয়ার কি খোলা আছে কোনো?    এ বাঁকা পথের শেষে মাঠ যেথা মেঘে মেশে    বসে কেহ আছে কি এখনো?    এ দুর্যোগে, শোনো ওগো শোনো!       আজ যদি দীপ জ্বালে দ্বারে    নিবে কি যাবে না বারে বারে?    আজ যদি বাজে বাঁশি গান কি যাবে না ভাসি    আশ্বিনের অসীম আঁধারে    ঝড়ে...

ছল কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | kobitar jagot

 তোমারে পাছে সহজে বুঝি  তাই কি এত লীলার ছল -    বাহিরে যবে হাসির ছটা ভিতরে থাকে আঁখির জল।    বুঝি গো আমি, বুঝি গো তব ছলনা -    যে কথা তুমি বলিতে চাও সে কথা তুমি বল না।।       তোমারে পাছে সহজে ধরি কিছুরই তব কিনারা নাই -    দশের দলে টানি গো পাছে কিরূপ তুমি, বিমুখ তাই।    বুঝি গো আমি, বুঝি গো তব ছলনা -    যে পথে তুমি চলিতে চাও সে পথে তুমি চল না।।       সবার চেয়ে অধিক চাহ, তাই কি তুমি ফিরিয়া যাও -    হেলার ভরে খেলার মতো ভিক্ষাঝুলি ভাসায়ে দাও?    বুঝেছি আমি, বুজেছি তব ছলনা -    সবার যাহে তৃপ্তি হল তোমার তাহে হল না।

'ছয়' কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | কবিতার জগৎ

 অতিথিবৎসল,    ডেকে নাও পথের পথিককে    তোমার আপন ঘরে,    দাও ওর ভয় ভাঙিয়ে।    ও থাকে প্রদোষের বস্তিতে,    নিজের কালো ছায়া ওর সঙ্গে চলে    কখনো সমুখে কখনো পিছনে,    তাকেই সত্য ভেবে ওর যত দুঃখ যত ভয়।    দ্বারে দাঁড়িয়ে তোমার আলো তুলে ধরো,    ছায়া যাক মিলিয়ে,    থেমে যাক ওর বুকের কাঁপন।       বছরে বছরে ও গেছে চলে    তোমার আঙিনার সামনে দিয়ে,    সাহস পায় নি ভিতরে যেতে,    ভয় হয়েছে পাছে ওর বাইরের ধন    হারায় সেখানে।    দেখিয়ে দাও ওর আপন বিশ্ব    তোমার মন্দিরে,    সেখানে মুছে গেছে কাছের পরিচয়ের কালিমা,    ঘুচে গেছে নিত্যব্যবহারের জীর্ণতা,    তার চিরলাবণ্য হয়েছে পরিস্ফুট।       পান্থশালায় ছিল ওর বাসা,    বুকে আঁকড়ে ছিল তারই আসন, তারই শয্যা,    পলে পলে যার ভাড়া জুগিয়ে দিন কাটালো    কোন্ মুহূর্তে তাকে ছাড়বে ভয়ে ...

চির আমি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | কবিতার জগৎ

 যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে,    বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে,    চুকিয়ে দেব বেচা-কেনা, মিটিয়ে দেব লেনা-দেনা    বন্ধ হবে আনাগোনা এই হাটে -    আমায় তখন নাই বা মনে রাখলে,    তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাই বা আমায় ডাকলে।।       যখন জমবে ধুলা তানপুরাটার তারগুলায়,    কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়,    ফুলের বাগান ঘন ঘাসের পরবে সজ্জা বনবাসের,    শ্যাওলা এসে ঘিরবে দিঘির ধারগুলায় -    আমায় তখন নাই বা মনে রাখলে,    তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাই বা আমায় ডাকলে।।       যখন এমনি করেই বাজবে বাঁশি এই নাটে,    কাটবে গো দিন যেমন আজও দিন কাটে।    ঘাটে ঘাটে খেয়ার তরী এমনি সেদিন উঠবে ভরি,    চরবে গোরু, খেলবে রাখাল ওই মাঠে।    আমায় তখন নাই বা মনে রাখলে,    তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাই বা আমায় ডাকলে।।       তখন কে বলে গো, সেই প্রভাতে নেই আমি?    সকল খেলায় করবে খেলা এই-আমি। ...

চিত্ত তোমায় নিত্য হবে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | কবিতার জগৎ

 আমার চিত্ত তোমায় নিত্য হবে    সত্য হবে -    ওগো সত্য, আমার এখন সুদিন।    ঘটবে কবে।    সত্য সত্য সত্য জপি,    সকল বুদ্ধি সত্যে সঁপি,    সীমার বাঁধন পেরিয়ে যাব    নিখিল ভবে -    সত্য তোমার পূর্ণ প্রকাশ    দেখব কবে।       তোমায় দূরে সরিয়ে মরি    আপন অসত্যে।    কী যে কান্ড করি গো সেই    ভূতের রাজত্বে।    আমার আমি ধুয়ে মুছে    তোমার মধ্যে যাবে ঘুচে,    সত্য, তোমায় সত্য হব    বাঁচব তবে -    তোমার মধ্যে মরণ আমার মরবে কবে। 

চড়িভাতি কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | kobitar jagot

 ফল ধরেছে বটের ডালে ডালে;    অফুরন্ত আতিথ্যে তার সকালে বৈকালে    বনভোজনে পাখিরা সব আসছে ঝাঁকে ঝাঁক।    মাঠের ধারে আমার ছিল চড়িভাতির ডাক।    যে যার আপন ভাঁড়ার থেকে যা পেল যেইখানে    মালমসলা নানারকম জুটিয়ে সবাই আনে।    জাত-বেজাতের চালে ডালে মিশোল ক'রে শেষে    ডুমুরগাছের তলাটাতে মিলল সবাই এসে।    বারে বারে ঘটি ভ'রে জল তুলে কেউ আনে,    কেউ চলেছে কাঠের খোঁজে আমবাগানের পানে।    হাঁসের ডিমের সন্ধানে কেউ গেল গাঁয়ের মাঝে,    তিন কন্যা লেগে গেল রান্নাকরার কাজে।    গাঁঠ-পাকানো শিকড়েতে মাথাটা তার থুয়ে    কেউ পড়ে যায় গল্পের বই জামের তলায় শুয়ে।    সকল-কর্ম-ভোলা    দিনটা যেন ছুটির নৌকা বাঁধন-রশি-খোলা    চলে যাচ্ছে আপনি ভেসে সে কোন্ আঘাটায়    যথেচ্ছ ভাঁটায়।    মানুষ যখন পাকা ক'রে প্রাচীর তোলে নাই    মাঠে বনে শৈলগুহায় যখন তাহার ঠাঁই,    সেইদিনকার আল্গা-বিধির বাইরে-ঘোরা প্রাণ    ম...

গানের পারে-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | kobitar jagot

 দাঁড়িয়ে আছো তুমি আমার গানের ও পারে।    আমার সুরগুলি পায় চরণ, আমি পাই নে তোমারে।    বাতাস বহে মরি মরি, আর বেঁধে রেখো না তরী,    এসো এসো পার হয়ে মোর হৃদয়-মাঝারে।।    তোমার সাথে গানের খেলা দূরের খেলা যে -    বেদনাতে বাঁশি বাজায় সকল বেলা যে।    কবে নিয়ে আমার বাঁশি বাজাবে গো আপনি আসি    আনন্দময় নীরব রাতের নিবিড় আঁধারে?

কত অজানারে জানাইলে তুমি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | কবিতার জগৎ

 কত অজানারে জানাইলে তুমি,    কত ঘরে দিলে ঠাঁই-    দূরকে করিলে নিকট, বন্ধু,    পরকে করিলে ভাই।    পুরনো আবাস ছেড়ে যাই যবে    মনে ভেবে মরি কী জানি কী হবে,    নূতনের মাঝে তুমি পুরাতন    সে কথা যে ভুলে যাই।    দূরকে করিলে নিকট, বন্ধু,    পরকে করিলে ভাই।       জীবনে মরণে নিখিল ভুবনে    যখনি যেখানে লবে,    চির জনমের পরিচিত ওহে,    তুমিই চিনাবে সবে।    তোমারে জানিলে নাহি কেহ পর,    নাহি কোন মানা, নাহি কোন ডর,    সবারে মিলায়ে তুমি জাগিতেছ-    দেখা যেন সদা পাই।    দূরকে করিলে নিকট, বন্ধু,    পরকে করিলে ভাই।

ওরে নবীন ওরে আমার কাঁচা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | কবিতার জগৎ

 ওরে  নবীন, ওরে আমার কাঁচা,    ওরে সবুজ, ওরে অবুঝ,    আধমরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা।    রক্ত আলোর মদে মাতাল ভোরে    আজকে যে যা বলে বলুক তোরে,    সকল তর্ক হেলায় তুচ্ছ ক’রে    পুচ্ছটি তোর উচ্চে তুলে নাচা।    আয় দুরন্ত, আয় রে আমার কাঁচা।       খাঁচাখানা দুলছে মৃদু হাওয়ায়;    আর তো কিছুই নড়ে না রে    ওদের ঘরে, ওদের ঘরের দাওয়ায়।    ওই যে প্রবীণ, ওই যে পরম পাকা,    চক্ষুকর্ণ দুইটি ডানায় ঢাকা,    ঝিমায় যেন চিত্রপটে আঁকা    অন্ধকারে বন্ধ করা খাঁচায়।    আয় জীবন্ত, আয় রে আমার কাঁচা।       বাহিরপানে তাকায় না যে কেউ,    দেখে না যে বাণ ডেকেছে    জোয়ার-জলে উঠছে প্রবল ঢেউ।    চলতে ওরা চায় না মাটির ছেলে    মাটির ‘পরে চরণ ফেলে ফেলে,    আছে অচল আসনখানা মেলে    যে যার আপন উচ্চ বাঁশের মাচায়,    আয় অশান্ত, আয় রে আমার কাঁচা।   ...

আষাঢ় কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | কবিতার জগৎ

 নীল নবঘনে আষাঢ়গগনে তিল ঠাঁই আর নাহি রে।    ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।    বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর,    আউশের ক্ষেত জলে ভরভর,    কালি-মাখা মেঘে ও পারে আঁধার ঘনিছে দেখ্ চাহি রে।    ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।।       ওই ডাকে শোনো ধেনু ঘনঘন, ধবলীরে আনো গোহালে।    এখনি আঁধার হবে বেলাটুকু পোহালে।    দুয়ারে দাঁড়ায়ে ওগো দেখ্ দেখি    মাঠে গেছে যারা তারা ফিরিছে কি,    রাখালবালক কী জানি কোথায় সারা দিন আজি খোয়ালে।    এখনি আঁধার হবে বেলাটুকু পোহালে।।       শোনো শোনো ওই পারে যাবে বলে কে ডাকিছে বুঝি মাঝিরে।    খেয়া-পারাপার বন্ধ হয়েছে আজি রে।    পুবে হাওয়া বয়, কূলে নেই কেউ,    দু কূল বাহিয়া উঠে পড়ে ঢেউ,    দরদর বেগে জলে পড়ি জল ছলছল উঠে বাজি রে।    খেয়া-পারাপার বন্ধ হয়েছে আজি রে।।       ওগো, আজ তোরা যাস নে গো, তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে।    আকাশ আঁধার, বেলা বেশি আর...

আরশি কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | কবিতার জগৎ

 তোমার যে ছায়া তুমি দিলে আরশিরে    হাসিমুখ মেজে,    সেইক্ষণে অবিকল সেই ছায়াটিরে    ফিরে দিল সে যে।    রাখিল না কিছু আর,    স্ফটিক সে নির্বিকার    আকাশের মতো--    সেথা আসে শশী রবি,    যায় চলে, তার ছবি    কোথা হয় গত।       একদিন শুধু মোরে ছায়া দিয়ে, শেষে    সমাপিলে খেলা    আত্মভোলা বসন্তের উন্মত্ত নিমেষে    শুক্ল সন্ধ্যাবেলা।    সে ছায়া খেলারই ছলে    নিয়েছিনু হিয়াতলে    হেলাভরে হেসে,    ভেবেছিনু চুপে চুপে    ফিরে দিব ছায়ারূপে    তোমারি উদ্দেশে।       সে ছায়া তো ফিরিল না, সে আমার প্রাণে    হল প্রাণবান।    দেখি, ধরা পড়ে গেল কবে মোর গানে    তোমার সে দান।    যদিবা দেখিতে তারে    পারিতে না চিনিবারে    অয়ি এলোকেশী--    আমার পরান পেয়ে    সে আজি তোমারো চেয়ে    বহুগুণে বেশি...

আমি বহু বাসনায় প্রাণপণে চাই - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | kobitar jagot

 আমি বহু বাসনায় প্রাণপণে চাই,    বঞ্চিত করে বাঁচালে মোরে।    এ কৃপা কঠোর সঞ্চিত মোর    জীবন ভ'রে।    না চাহিতে মোরে যা করেছ দান    আকাশ আলোক তনু মন প্রাণ,    দিনে দিনে তুমি নিতেছ আমায়    সে মহাদানেরই যোগ্য করে    অতি-ইচ্ছার সংকট হতে    বাঁচায়ে মোরে।    আমি কখনো বা ভুলি, কখনো বা চলি    তোমার পথের লক্ষ্য ধরে-    তুমি নিষ্ঠুর সম্মুখ হতে    যাও যে সরে।    এ যে তব দয়া জানি হায়,    নিতে চাও ব'লে ফিরাও আমায়,    পূর্ণ করিয়া লবে এ জীবন    তব মিলনেরই যোগ্য করে    আধা- ইচ্ছার সংকট হতে    বাঁচায়ে মোরে। 

আমি চেয়ে আছি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | kobitar jagot

 আমি চেয়ে আছি তোমাদের সবা-পানে।    স্থান দাও মোরে সকলের মাঝখানে।    নীচে সব-নীচে এ ধূলির ধরণীতে    যেথা আসনের মূল্য না হয় দিতে,    যেথা রেখা দিয়ে ভাগ করা নাই কিছু,    যেথা ভেদ নাই মানে আর অপমানে।    স্থান দাও সেথা সকলের মাঝখানে।       যেথা বাহিরের আবরণ নাহি রয়,    যেথা আপনার উলঙ্গ পরিচয়।    আমার বলিয়া কিছু নাই একেবারে    এ সত্য যেথা নাহি ঢাকে আপনারে,    সেথায় দাঁড়ায়ে নিলাজ দৈন্য মম    ভরিয়া লইব তাঁহার পরম দানে।    স্থান দাও মোরে সকলের মাঝখানে। 

আমার মিলন লাগি তুমি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | কবিতার জগৎ

 আমার মিলন লাগি তুমি    আসছ কবে থেকে।    তোমার চন্দ্র সূর্য তোমায়    রাখবে কোথায় ঢেকে।    কত কালের সকাল-সাঁঝে    তোমার চরণধ্বনি বাজে,    গোপনে দূত গৃহ-মাঝে    গেছে আমায় ডেকে।       ওগো পথিক, আজকে আমার    সকল পরাণ ব্যেপে    থেকে থেকে হরষ যেন    উঠছে কেঁপে কেঁপে    যেন সময় এসেছে আজ,    ফুরালো মোর যা ছিল কাজ -    বাতাস আসে, হে মহারাজ,    তোমার গন্ধ মেখে। 

আমার খেলা যখন ছিল তোমার সনে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | কবিতার জগৎ

 আমার খেলা যখন ছিল তোমার সনে    তখন কে তুমি তা কে জানত।    তখন ছিল না ভয়, ছিল না লাজ মনে,    জীবন বহে যেত অশান্ত।    তুমি ভোরের বেলা ডাক দিয়েছ কত    যেন আমার আপন সখার মতো,    হেসে তোমার সাথে ফিরেছিলাম ছুটে    সেদিন কত-না বন-বনান্ত।       ওগো, সেদিন তুমি গাইতে যে সব গান    কোনো অর্থ তাহার কে জানত।    শুধু সঙ্গে তারি গাইত আমার প্রাণ,    সদা নাচত হৃদয় অশান্ত।    হঠাৎ খেলার শেষে আজ কী দেখি ছবি -    স্তব্ধ আকাশ, নীরব শশী রবি,    তোমার চরণপানে নয়ন করি নত    ভুবন দাঁড়িয়ে গেছে একান্ত।

আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | kobitar jagot

 আমার এই পথ-চাওয়াতেই আনন্দ।    খেলে যায় রৌদ্র ছায়া, বর্ষা আসে বসন্ত।।       কারা এই সমুখ দিয়ে আসে যায় খবর নিয়ে,    খুশি রই আপন মনে- বাতাস বহে সুমন্দ।    সারাদিন আঁখি মেলে দুয়ারে রব একা,    শুভখন হঠাৎ এলে তখনি পাব দেখা।    ততখন ক্ষণে ক্ষণে হাসি গাই আপন-মনে,    ততখন রহি রহি ভেসে আসে সুগন্ধ।।       আমার এই পথ-চাওয়াতেই আনন্দ।    খেলে যায় রৌদ্র ছায়া, বর্ষা আসে বসন্ত।    আমার এই পথ-চাওয়াতেই আনন্দ।

আমার এ প্রেম নয় তো ভীরু - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | কবিতার জগৎ

 আমার এ প্রেম নয় তো ভীরু,    নয় তো হীনবল -    শুধু কি এ ব্যাকুল হয়ে    ফেলবে অশ্রুজল।    মন্দমধুর সুখে শোভায়    প্রেম কে কেন ঘুমে ডোবায়।    তোমার সাথে জাগতে সে চায়    আনন্দে পাগল।       নাচ' যখন ভীষণ সাজে    তীব্র তালের আঘাত বাজে,    পালায় ত্রাসে পালায় লাজে    সন্দেহ বিহবল।    সেই প্রচন্ড মনোহরে    প্রেম যেন মোর বরণ করে,    ক্ষুদ্র আশার স্বর্গ তাহার    দিক সে রসাতল।

আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | কবিতার জগৎ

 আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।    তব অবগুন্ঠিত কুন্ঠিত জীবনে    কোরো না বিড়ম্বিত তারে।    আজি খুলিয়ো হৃদয়দল খুলিয়ো,    আজি ভুলিয়ো আপনপর ভুলিয়ো,    এই সংগীতমুখরিত গগনে    তব গন্ধ করঙ্গিয়া তুলিয়ো।    এই বাহিরভূবনে দিশা হারায়ে    দিয়ো ছড়ায়ে মাধুরী ভারে ভারে।       অতি নিবিড় বেদনা বনমাঝে রে    আজি পল্লবে পল্লবে বাজে রে -    দূরে গগনে কাহার পথ চাহিয়া    আজি ব্যকুল বসুন্ধরা সাজে রে।    মোর পরানে দখিন বায়ু লাগিছে,    কারে দ্বারে দ্বারে কর হানি মাগিছে,    এই সৌরভবিহবল রজনী    কার চরণে ধরণীতলে জাগিছে।    ওগো সুন্দর, বল্লভ, কান্ত,    তব গম্ভীর আহবান কারে। 

আজ ধানের ক্ষেতে রৌদ্রছায়ায় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | কবিতার জগৎ

 আজ  ধানের ক্ষেতে রৌদ্রছায়ায়    লুকোচুরির খেলা।    নীল আকাশে কে ভাসালে    সাদা মেঘের ভেলা।    আজ  ভ্রমর ভোলে মধু খেতে,    উড়ে বেড়ায় আলোয় মেতে,    আজ  কিসের তরে নদীর চরে    চখাচখির মেলা।       ওরে যাবো না আজ ঘরে রে ভাই,    যাবো না আজ ঘরে!    ওরে আকাশ ভেঙে বাহিরকে আজ    নেব রে লুঠ করে।    যেন জোয়ার জলে ফেনার রাশি    বাতাসে আজ ফুটেছে হাসি,    আজ  বিনা কাজে বাজিয়ে বাঁশি    কাটবে সারা বেলা। 

আকাশের চাঁদ কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | কবিতার জগৎ

 হাতে তুলে দাও আকাশের চাঁদ —    এই হল তার বুলি।    দিবস রজনী যেতেছে বহিয়া,    কাঁদে সে দু হাত তুলি।    হাসিছে আকাশ, বহিছে বাতাস,    পাখিরা গাহিছে সুখে।    সকালে রাখাল চলিয়াছে মাঠে,    বিকালে ঘরের মুখে।    বালক বালিকা ভাই বোনে মিলে    খেলিছে আঙিনা-কোণে,    কোলের শিশুরে হেরিয়া জননী    হাসিছে আপন মনে।    কেহ হাটে যায় কেহ বাটে যায়    চলেছে যে যার কাজে —    কত জনরব কত কলরব    উঠিছে আকাশমাঝে।    পথিকেরা এসে তাহারে শুধায় ,    'কে তুমি কাঁদিছ বসি।'    সে কেবল বলে নয়নের জলে,    'হাতে পাই নাই শশী।'      সকালে বিকালে ঝরি পড়ে কোলে    অযাচিত ফুলদল,    দখিন সমীর বুলায় ললাটে    দক্ষিণ করতল।    প্রভাতের আলো আশিস-পরশ    করিছে তাহার দেহে,    রজনী তাহারে বুকের আঁচলে    ঢাকিছে নীরব স্নেহে।    কাছে আসি শিশু মাগিছে...

আকাশ তলে উঠল ফুটে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | কবিতার জগৎ

 আকাশতলে উঠল ফুটে    আলোর শতদল।    পাপড়িগুলি থরে থরে    ছড়ালো দিক্-দিগন্তরে,    ঢেকে গেলো অন্ধকারের    নিবিড় কালো জল।    মাঝখানেতে সোনার কোষে    আনন্দে, ভাই, আছি বসে -    আমায় ঘিরে ছড়ায় ধীরে    আলোর শতদল।       আকাশেতে ঢেউ দিয়ে রে    বাতাস বহে যায়।    চার দিকে গান বেজে ওঠে,    চার দিকে প্রাণ নেচে ছোটে,    গগনভরা পরশখানি    লাগে সকল গায়।    ডুব দিয়ে এই প্রাণ-সাগরে    নিতেছি প্রাণ বক্ষ ভরে,    ফিরে ফিরে আমায় ঘিরে    বাতাস বহে যায়।       দশ দিকেতে আঁচল পেতে    কোল দিয়েছে মাটি।    রয়েছে জীব যে যেখানে    সকলকে সে ডেকে আনে,    সবার হাতে সবার পাতে    অন্ন সে দেয় বাঁটি।    ভরেছে মন গীত গন্ধে,    বসে আছি মহানন্দে,    আমায় ঘিরে আঁচল পেতে    কোল দিয়েছে মাটি।    ...

অমন আড়াল দিয়ে লুকিয়ে গেল - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | kobitar jagot

 অমন আড়াল দিয়ে লুকিয়ে গেলে    চলবে না।    এবার হৃদয় মাঝে লুকিয়ে বোসো,    কেউ জানবে না, কেউ বলবে না।    বিশ্বে তোমার লুকোচুরি,    দেশ বিদেশে কতই ঘুরি -    এবার বলো আমার মনের কোণে    দেবে ধরা, ছলবে না।    আড়াল দিয়ে লুকিয়ে গেলে    চলবে না।       জানি আমার কঠিন হৃদয়    চরণ রাখার যোগ্য সে নয় -    সখা, তোমার হাওয়া লাগলে হিয়ায়    তবু কি প্রাণ গলবে না।       না হয় আমার নাই সাধনা,    ঝরলে তোমার কৃপার কণা    তখন নিমেষে কি ফুটবে না ফুল    চকিতে ফল ফলবে না।    আড়াল দিয়ে লুকিয়ে গেলে    চলবে না।

অভিমান কবিতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | কবিতার জগৎ

 কারে দিব দোষ বন্ধু, কারে দিব দোষ!    বৃথা কর আস্ফালন, বৃথা কর রোষ।    যারা শুধু মরে কিন্তু নাহি দেয় প্রাণ,    কেহ কভু তাহাদের করে নি সম্মান।    যতই কাগজে কাঁদি, যত দিই গালি,    কালামুখে পড়ে তত কলঙ্কের কালি।    যে তোমারে অপমান করে অহর্নিশ    তারি কাছে তারি 'পরে তোমার নালিশ!    নিজের বিচার যদি নাই নিজহাতে,    পদাঘাত খেয়ে যদি না পার ফিরাতে--    তবে ঘরে নতশিরে চুপ করে থাক্,    সাপ্তাহিকে দিগ্বিদিকে বাজাস নে ঢাক।    একদিকে অসি আর অবজ্ঞা অটল,    অন্য দিকে মসী আর শুধু অশ্রুজল।